১৪০ জঙ্গি ধরতে অভিযান ॥ শ্রীলঙ্কায় হামলার মাস্টারমাইন্ড নিহত, পুলিশ প্রধানের পদত্যাগ

42

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শ্রীলঙ্কার পুলিশ সে দেশের ১৪০ জন নাগরিককে খুঁজছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শ্রীলঙ্কার কিছু তরুণ ২০১৩ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে শ্রীলঙ্কার ১৪০ জন নাগরিক আইএসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য খোঁজা হচ্ছে। এদিকে গত রবিবারের এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। শ্রীলঙ্কা পুলিশ বৃহস্পতিবার নিগম্বো শহরে হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিদের নাম ও ছবি প্রকাশ করে।
এখন পর্যন্ত হামলায় জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে ৭৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইস্টার সানডের দিন শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা, চারটি অভিজাত হোটেল এবং একটি বাড়িতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। নয় আত্মঘাতী হামলাকারী আট জায়গায় হামলা চালায়। তারা সবাই স্থানীয় চরমপন্থী দল ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের (এনটিজে) সদস্য বলে ধারণা।
এদিকে এই ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী এক জঙ্গি একই দিন রাজধানী কলম্বোর একটি হোটেলে হামলার সময় নিহত হয়। নিহত জাহরান হাশিম এই হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাকে জানিয়েছে শানগ্রি-লা হোটেলে হামলা চলাকালে জাহরান হাশিম নিহত হয়েছে। ইসলামিক স্টেট শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার দায় স্বীকার করার পর তাদের ওয়েবসাইট আমাক প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে হাশিমকে দেখা যায়। ফুটেজটি হামলার আগে না পরে তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থানের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। শানগ্রি-লা হোটেলে হামলায় হাশিমের কি ধরনের ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সিরিসেনা কিছু বলতে পারেননি। রবিবার শ্রীলঙ্কার যে ছয়টি স্থানে বোমা হামলা চালানো হয় সেসব হামলার অন্যতম ছিল শানগ্রি-লা হোটেলে হামলা। এক দশকের মধ্যে ভয়ঙ্করতম ওই আত্মঘাতী হামলার পর ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশে জারি করা হয়েছে জরুরী অবস্থা। পুরো দেশে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য। ভারতের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো ও পুলিশ প্রধান পুজিত জয়সুন্দর। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা সাংবাদিকদের বলেন, জয়সুন্দরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই নয়া পুলিশ প্রধান নিয়োগ দেয়া হবে।
ভুল ছবি- ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা পুলিশ : ভয়াবহ এ হামলায় জড়িত সন্দেহভাজনদের তালিকায় ভুলে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর ছবি প্রকাশ করে ফেলায় ‘ক্ষমা চেয়েছে’ শ্রীলঙ্কা পুলিশ। লেখক ও সমাজকর্মী ওই নারীর নাম আমারা মজিদ। তিনি ‘দ্য ফরেইনারস’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেটিতে ইসলাম সম্পর্কে চলমান ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছেন। শ্রীলঙ্কা পুলিশ বৃহস্পতিবার হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহভাজন ছয় ব্যক্তির ছবি ও নাম প্রকাশ করে। সেখানে নিজের ছবি দেখে ওই দিনই এক টুইটে আমারা বলেন, আজ সকালে শ্রীলঙ্কা সরকার ভুলে আমাকে ইস্টার হামলাকারী আইএসের একজন বলে চিহ্নিত করেছে। সন্দেহভাজনদের তালিকায় আমারার ছবি দিয়ে তার নাম ফাতিমা খাদিজা বলা হয়। বাল্টিমোরে জন্ম নেয়া আমারার বাবা-মা শ্রীলঙ্কার নাগরিক। আমারা লেখেন, এটা নিশ্চিতভাবেই ভুল এবং সত্যি বলতে, হামলা নিয়ে নজরদারিতে এরই মধ্যে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন নানাভাবে নিপীড়নের শিকার। আর ভুল অভিযোগ বা তদন্তের প্রয়োজন আমার নেই। দয়া করে আমাকে ভয়াবহ ওই হামলার সঙ্গে জড়ানো এবং আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা বন্ধ করুন। পরে এক টুইটে তিনি জানান, ভুলে তার ছবি ব্যবহার করায় শ্রীলঙ্কা পুলিশ ক্ষমা চেয়েছে। ১৬ বছর বয়সে আমারা অনলাইনে ‘হিজাব প্রোজেক্ট’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। ওই আন্দোলনে তিনি সব ধর্মের নারীদের হিজাব পরার চেষ্টা করার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা জানানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে বিবিসির ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী এবং ব্যতিক্রমী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক খোলা চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ‘আমেরিকার জনগণের আতঙ্ক ও পাগলামিকে পুঁজি করে রাজনীতি করার’ অভিযোগ তুলেছিলেন।