কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মধ্যকার সম্পর্কের আগুনে ফের ঘি ঢাললেন উভয় নেতা। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটে বুনিয়াদপুরে নির্বাচনী সভা করতে আসেন নরেন্দ্র মোদি। একই দিন নদিয়ার কালিগঞ্জে সভা করেন মমতা।
প্রথমে মমতাকে উদ্দেশ করে মোদি বলেন, তাকে (মমতা) চিনতে আমি ভুল করেছি। আর পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ তো করবেই। মোদি বলেন, বাংলায় মমতা দিদি যা করেছেন, সেই কাজের জন্য এই পৃথিবীর ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না। মা, মাটি, মানুষের নামে জনতাকে ¯্রফে ধোঁকা দিয়েছেন দিদি। বাংলার মানুষ অনেক আশা করে কমিউনিস্টদের হাত থেকে বাঁচতে দিদিকে ক্ষমতায় এনেছিল। বাংলার জনতা যে ভুল করেছিল, সেই ভুল আমিও করেছিলাম।
তখন তাকে দেখে আমার সততার মূর্তি মনে হতো। মনে হতো, মমতাই বাংলার জনতার রক্ষাকর্তা। কিন্তু পরে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যা দেখলাম, তা দেখে লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেছে। যদি প্রধানমন্ত্রী ভুল করতে পারে তবে বাংলার জনতা তো করবেই। মমতাকে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের স্পীড ব্রেকার আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, নির্বাচনে প্রথম দুই দফা ভোটগ্রহণের পর স্পীড ব্রেকার দিদির ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে তারকা নিয়ে নিজের দলের পক্ষে প্রচার চালানোর সমালোচনা করেন মোদি। তিনি বলেন,পাশের দেশ থেকে তারকা এনে নির্বাচনে প্রচার চালানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ। শুধু মুসলিম ভোটারদের ভোট টানতে এই কাজ করা হয়েছে বলে মনে করেন মোদি।
অপরদিকে কালিগঞ্জের জনসভায় মোদিকে অত্যন্ত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন মমতা।
তিনি বলেন, মোদি বাবু আপনার চেয়ার টলোমলো। গত পাঁচ বছরে আপনি দেশের জন্য কি কি করেছেন তা ভারতবাসী জানতে চায়। ক্ষমতায় থাকাকালে আপনি কত দেশ ঘুরেছেন। দেশের কত টাকা খরচ করেছেন তার হিসাব দিতে হবে। মমতার বক্তব্যের মধ্যে সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সময় বক্তব্য থামিয়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। এরপর উপস্থিত জনতাকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বার বার মঞ্চ থেকেই সাধারণ মানুষকে শান্ত হয়ে বসে থাকার অনুরোধ করেন। এমনকি সোনা-বাছা বলেও সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কে কার কথা শোনে। সবাই সবার মতো সভায় চিৎকার করতে থাকে। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে এক সময় মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। মঞ্চ থেকেই বলতে থাকেন, আমি গত ২০ দিন ধরে চিৎকার করছি। কার্যত অবস্থা বেগতিক দেখে যারা বেরিয়ে যেতে চান তাদের বেরিয়ে যাওয়ারও কথা বলেন নেত্রী। কিন্তু তাতেও সভাস্থলে থাকা কয়েক শ’ মানুষকে থামানো সম্ভব হয় না। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্য থামিয়ে দেন। মঞ্চে থাকা নেতাদের পরিস্থিতি সামালের নির্দেশ দেন। সেই মতো সবাই মানুষকে শান্ত করার কাজে নেমে পড়েন। এর পর প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ফের বক্তব্য শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভারতের রাজনৈতিক মহল বলছে, দেশের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। তাই বৈশাখের উত্তাপ তোয়াক্কা না করেই সভা কিংবা মিছিলে যোগ দিচ্ছেন বহু মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় নতুন কিছু নয়। তবু শনিবার কালিগঞ্জের প্রচারে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় মমতাকে। কয়েকদিন আগে মৌসম বেনজির নুরের সভাতেও একই অবস্থা হয়েছিল। এতটাই ভিড় ছিল সেখানে যে মমতা বক্তব্য রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তৃণমূল নেত্রী। সেবারও একইভাবে মঞ্চে বক্তব্য থামিয়ে দেন নেত্রী। এবারও সেই ঘটনার অন্যথা ঘটল না।
ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থদফা সভা করতে আসেন মোদি। এর আগে তিনটি সভা করে যান মোদি। ২৩ এপ্রিল আসানসোল এবং ২৪ এপ্রিল রানাঘাটে ফের সভা করবেন মোদি।