বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
পাকা ধান কাটতে অনীহা দেখা দিয়েছে তাহিরপুরে হাওর পারের কৃষকদের মধ্যে। ফলন ভাল না হওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক মজুরী পোষাবে না বলে এ অনীহা কৃষকদের। এমনটা জানা গেলে হাওর পারের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে।
উজান তাহিরপুর গ্রামের শনির হাওরের কৃষক সাইফুল ইসলাম তিনি জানান, দু একদিন হলো তিনি ৮ কেদার জমির ধান কাটিয়েছেন। (এক কেদার সমান ৩০ শতক) এতে তিনি ধান পেয়েছেন ২৩ থেকে ২৪ মন । ২৪ মন ধানের বাজার ধর রয়েছে মন প্রতি ৭ শ টাকা হলে ১৬ হাজার ৮শ টাকা। ৮ কেদার জমি কাটতে শ্রমিক মজুরী দিতে হয়েছে ১৬ হাজার টাকা, জমি থেকে ধান পরিবহন করে মাড়াইখলা পর্যন্ত নিয়ে আসতে ট্রলি খরচ দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা এবং ধান মাড়াই দিতে ব্যায় হয়েছে ১৬ শ টাকা । এতে করে তার মোট ব্যায় হয়েছে ২১ হাজার ৬ শ টাকা। তিনি ধান পেয়েছেন ১৬ হাজার ৮শ টাকার। তিনি শুধু মাত্র ধান কাটতে গিয়েই ৫ হাজার টাকার মত লোকশান দিচ্ছেন। তাছাড়া বোর ফসল রোপনের মৌসুমের ব্যায় তো রয়েছেই।
একই অবস্থার কথা জানালেন মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক একরাম হোসেন। তিনি স্থানীয় জাতের লাকই ধান করেছিলেন ২ কেদার। তা থেকে তিনি ধান পেয়েছেন ৬ মন। ৬ মন ধানে তার শ্রমিক মজুরীই পোষাবেনা বলে তিনি জানান।
সরজমিনে শনির হাওরে বিভিন্ন বোর ফসলি জমিতে গিয়ে দেখা যায় হাওরের পর হাওর বোর ফসল পাকতে শুরু করেছে। জমিতে জমিতে ধানে শীষ মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকলেও প্রতিটি ধানের শীষে দেখা যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত চিটা। তাছাড়া ধানের ফলনও একটা ভাল নয়। শুধু এ কারণেই ধান কাটতে কৃষকদের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে।
ফলন ভাল না হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা দেখছেন দীর্ঘ খরা। খরার কারনেই বোর ফসল উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বর্তমানে অনেক কৃষক ধান কাটবেন কি না কাটবেন এ অবস্থ্যায় দোদুল্যমান রয়েছেন।
ব্রি আর ২৯ ও স্থানীয় জাতের লাকাই ধান কিছুটা হলেও কাটবে কৃষক কিন্তু ব্রি আর-২৮ ধান কাটার আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকরা।
চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার ২৫ টি ছোট বড় হাওরে ১৮ হাজার ২ শ হেক্টর জমিতে বোর ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি হাওর পারের কৃষকদের একই অবস্থা। ধান পাকতে শুরু করলেও তারা ধান কাটবেন কিনা সংশয়ে রয়েছেন। অনেকে আবার ধান না কাটার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন।
মাটিয়ান হাওরপার বড়দল গ্রামের কৃষক আলিম উদ্দিন তিনি জানান, চলতি বছর তিনি ৪ কেদার জমিতে বোর ধান চাষাবাদ করেছিলেন। বর্তমানে ফলন ভাল না হওযায় শ্রমিক ব্যয় পোষাবে না তাই তিনি ধান কাটবেন না।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী খরার কারণে চলতি বছর ধানে প্রচুর ছিটা হয়েছে তাছাড়া ফলনও তেমন ভাল হয়নি।