নদী দূষণ রোধে এগিয়ে আসুন – প্রধানমন্ত্রী

115

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে নদী দূষণ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পানিসম্পদ দূষণের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপীই এটি একটি সমস্যা। এই সমস্যাটি নদীতেই কেবল নয়, সাগরেও দেখা দিচ্ছে, সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলা। আমি সকলকে বলব যে, নদীতে বর্জ্য ফেলা সকলকে বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।’ ‘কাজেই প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা গড়ে তুলবেন তারা যেন নদী দূষণ না করেন। সেজন্য তাদের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্মাণ করতে হবে, পানি শোধনাগার করতে হবে, যোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করার সময়ও এদিক সেদিক বর্জ্য না ফেলার প্রতি লক্ষ্য রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা আমরা জানি। আর সেজন্যই নিজস্ব অর্থ দিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে এই জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন প্রচুর বৃক্ষরোপণ করা। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বলব কেবল নদী ড্রেজিং করলেই হবে না, সেখানে বৃক্ষরোপণটাও করে দিতে হবে। প্রতিটি উপকূল অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনীর সৃষ্টি করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় নদী ড্রেজিংয়ের মাটি আবার নদীতেই না ফেলে পাড়ে জুট জিও টেক্সটাইলের সাহায্যে পকেট সিস্টেম করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাহলে সেখান থেকে অনেক ভূমিও উদ্ধার করা সম্ভব হবে যেখানে পরবর্তীতে কৃষি এবং শিল্পায়ন দুটি কাজই করা যাবে। নদী দূষণমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদী সংরক্ষণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন যেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।’ শেখ হাসিনা এ সময় শহরাঞ্চলে দৈনন্দিন কাজে পানির অপচয় রোধ করা প্রত্যেকের নাগরিক কর্তব্য বলেও উল্লেখ করেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এবং একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয় সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এতে বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’র ওপর নির্মিত দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শতবর্ষের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার একটি স্মারক উপহার দেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মিশন প্রতিনিধি ও প্রধান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের দেশের পানি ব্যবস্থাপনা উজানের দেশের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই জাতির পিতা আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৭২ সালে ‘যৌথ নদী কমিশন-জেআরসি’ গঠন করেন। তিনি বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরও বাস্তবায়ন করে। তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট।’ বিভিন্ন কারণে এক সময়ের খর গ্রোতা নদীগুলো মরে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গতিপথ ও নাব্য পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ শক্তিশালীকরণ এবং প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় নদীর তীর বরাবর বাফারজোন তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার প্রধান বলেন, নদ-নদীর সুরক্ষা ও নৌপরিবহনকে নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। এর দীর্ঘ সময় পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯-’১৩ মেয়াদকালে আরও ১৪ ড্রেজার সংগ্রহ করে। বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২২, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর আওতায় ৪০ ড্রেজার রয়েছে। আরও ৮০ ড্রেজার সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘চলতি মেয়াদে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনর্খনন করে নৌ চলাচলের উপযোগী করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় বালু মহাল করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, ‘এজন্য আমি ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছি এক জায়গায় বেশিদিন বালু মহাল করা যাবে না। বালু মহালগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করতে হবে যাতে করে আমাদের ওই অঞ্চলটা নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে।’ তিনি এ সময় হাওড়-বাঁওড় ও জলাধার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রথমবার (’৯৬ সালে) সরকারে এসেই এ সংশ্লিষ্ট ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পানি আইন ২০১৩ করেছি এবং এর বিধিমালাও ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। যা বাস্তবায়ন করা একান্তভাবে দরকার। সরকার প্রধান বলেন, ‘বৃষ্টির পানিকে সংরক্ষণ করা। ভূ-উপরিস্থ পানি যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করা এবং ভূগর্ভস্থ পানি যথা সম্ভব ব্যবহার না করাÑ সে দিকেও আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’ ‘অর্থাৎ আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করতে হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে পানিকে সংরক্ষণ করা এবং পানির যথাযথভাবে ব্যবহার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে,’ বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে নদী শাসন, নদী ড্রেজিং এবং খাল, বিল, নদী-নালা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।