কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র শবে মেরাজ আজ বুধবার। আজকের রাতেই এই সম্মানিত রজনী। এই রজনীতে ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ দিদার লাভ করেন। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, ইসলামে শবে মেরাজের গুরুত্ব অনেক। এই মিরাজের মাধ্যমে মহানবী (সা.) আল্লাহ কাছ থেকে মুসলিম জাতির জন্য অনেক বিধি-বিধান পেয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রত্যেহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান আসে এই মিরাজ থেকেই।
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াতের একাদশতম বছরে (৬২০ সালে) আরবী রজব মাসে রাতে প্রথমে কাবা শরীফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান। সেখানে তিনি নবীদের সঙ্গে জামায়াতে ইমামতি করেন। অতপর তিনি বিশেষ বাহনে উর্ধলোকে গমন করেন। উর্ধাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহ সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানের ১৭ নম্বর সূরা বনী ইসরাইলে এই বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশেপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেমন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি।
এদিকে পবিত্র শবে মেরাজ উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচী নিয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মিরাজের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা ওয়াজ ও মিলাদ মহফিল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে আজ বুধবার রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে মিরাজ উদ্যাপিত হবে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বুধবার বাদ আছর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘লাইলাতুল মিরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ পেশ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম। সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম।
ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মিরাজ বা মিরাজের রাত যা সচরাচর শবে মেরাজের রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই রাতে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধকাশে আরোহন করেছিলেন। এবং আল্লাহ সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবুওয়াতের ১১ বছরে ২৭ রজবের রাতে এই মহান ঘটনা সংঘটিত হয়। নবীজীর বয়স তখন ৫১ বছর। মক্কায় ইসলাম প্রচারের পর থেকে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা কুরাইশদের দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলেন। কুরাইশরা এক পর্যায়ে বনু হাশিম গোত্রের ওপর অবরোধ আরোপ করে। নবীজী এবং তার প্রিয়তম স্ত্রী খাজিদা (রা.) এবং বনু হাশিম গোত্রে প্রধান আবু তালিব পাহাড়ের উপত্যকায় চলে যান। সেখানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন। কিন্তু তিন বছর পর অবরোধ তুলে নেয়া হলে এরই মধ্যে মহানবী (সা.) তার প্রিয়তম স্ত্রীকে হারান। কিছু দিনের ব্যবধানে পরোলোক গমন করেন তার আশ্রয়দাতা এবং প্রিয় চাচা আবু তালিবও। দুই প্রিয়জনকে হারিয়ে তিনি অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। ঠিক এই সময়ই আল্লাহ্ নবী মুহাম্মদকে (সা.) নিজের কাছে ডেকে নেন। তাকে সান্ত¦না দেন। একই সঙ্গে নির্ভয়ে ইসলামের বাণী প্রচারে উদ্বুদ্ধ করেন।
এই রাতে তিনি যখন মসজিদুল হারামে অবস্থান করছিলেন ঠিক সেই সময় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) নবীকে সঙ্গে নিয়ে মিরাজের গমণের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রথমে বোরাকে চড়ে যান মসজিদুল আকসায়। সেখানে নবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন এবং ইমামতি করেন। এরপর সেখান থেকে ঐশ্বরিক উপায়ে উর্ধকাশে গমন করেন। যাওয়ার পথে তিনি বিভিন্ন নবী রাসুলদের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করেন। এর মধ্যে প্রথম আসমানে সাক্ষাত লাভ করেন প্রথম মানব এবং নবী আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে হযরত ইসা (আ.) এবং ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে দেখা পান হযরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আ.) এবং সপ্ত আসমানে তিনি সাক্ষাত লাভ করেন হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর সঙ্গে।
এই মিরাজের রাতেই মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদত করা যাবে না। উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। পিতামাতার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। নিকট আত্মীয় স্বজনের অধিকার দিতে হবে, মিসকিন ও পথশিশুদের অধিকার দিতে হবে। অপচয় করা যাবে না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। কার্পণ্য বা কৃপণতাও করা যাবে না। সন্তান হত্যা করা যাবে না। ব্যাভিচারের ধারে-কাছেও যাওয়া যাবে না। মানব হত্যা করা যাবে না। এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। প্রতিশ্রুত পালন বা ওয়াদা পূর্ণ করতে হবে। ওজন বা মাপে কম দেয়া যাবে না। অজ্ঞতার সঙ্গে কোন কিছু করা যাবে না। পৃথিবী বা জমিনের ওপর দম্ভ ভরে চলাফেরা করা যাবে না।
এছাড়াও মুসলমানদের ইমানের পরেই নামাজ যা মিরাজের রাতেই আল্লাহ কাছ থেকে উপহার হিসেবে লাভ করেন তিনি। মিরাজের রাতের এই আদেশ নিষেধগুলো সূরা বনি ইসরাইলে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।