স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর শাহপরান এলাকার খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের বাসায় লজিং শিক্ষক হিসেবে থাকতেন মদন মোহন কলেজের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯)। শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসলিম রূপাকে (১৯) পড়াতেন তিনি। এক পর্যায়ে রুপাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন সাইফুর। এতে ক্ষুব্ধ হন রুপার প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেন (২৩)। রূপা ও মোজাম্মিল পরিকল্পনা করে হত্যা করেন সাইফুরকে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মোজাম্মিল ও রুপা সিলেট মহানগর ৩য় আদালতের হাকিম সাইফুর রহমানের কাছে ৬ ঘন্টার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানান। রূপা শাহপরান থানার খাদিমপাড়া দত্তগ্রাম খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের পুত্র ও মোজাম্মিল ছাতক থানার আলমপুর গ্রামের মো: নজির আলীর পুত্র।
আদালতে গ্রেফতারকৃত মোজাম্মিল ও রূপা জানায়, নগরীর সোবহানীঘাটস্থ হোটেল মেহেরপুর এর একটি কক্ষে রুম ভাড়া করে তারা। পরে সেমাইয়ের সাথে বিষ মিশিয়ে সাইফুরকে অজ্ঞান করা হয়। এক পর্যায়ে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সাইফুর অসুস্থ বলে সিএনজিতে তোলে নেয় আসামীদ্বয়। তারপর গাড়ির মধ্যেই দুজন মিলে ফাঁস লাগিয়ে সাইফুরের মৃত্যু নিশ্চিত করে তার লাশ ফেলে দেয় দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায়। নিহত সাইফুর রহমান মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফলতইল সগাম গ্রামের মো. ইউসুব আলীর পুত্র।
এর আগে মদন মোহন কলেজের শিক্ষক সাইফুর হত্যার ঘটনায় গত রবিবার রাতেই নগরীর টিলাগড় থেকে ছাতক উপজেলার আলমপুর গ্রামের মোজাম্মিল হোসেন এবং খিদিরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিশাত তাসলিম রুপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার নিহত সাইফুর রহমানের মা রনিফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-০১ (০১/০৪/২০১৯)।
তবে সাইফুররের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক সাইফুর রহমানের সাথে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রেম চলছে রূপার। রূপাও ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। সম্প্রতি মোজাম্মিলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন রূপা। এতে বাধা দেন সাইফুর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, সাইফুরের লাশ উদ্ধারের পরই তদন্তে নামে পুলিশ। এতে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। এই সূত্রধরে মোজাম্মিল ও রুপাকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। প্রেমসংক্রান্ত বিরোধের কারণেই সাইফুরকে হত্যা করা হয় বলেও জবনবন্দিতে জানায় তারা। তিনি জানান, নগরীর সোবহানীঘাটস্থ হোটেল মেহেরপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওঠে রুমা ও মোজাম্মিল। তিনি জানান, প্রভাষক সাইফুর রহমানকে কৌশলে এনে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ ফেলে দেয় দক্ষিণ সুরমায় তেলিরাই এলাকায়।
কলেজ শিক্ষক সাইফুর হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা।
এদিকে, মদন মোহন কলেজের প্রভাষক সাইফুর হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামী ধরার কৃতিত্ব দেখালো পুলিশ। গত রবিবার সকাল ১০ টায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে একই দিন পৃথক অভিযান চালিয়ে আসামী গ্রেফতারে সক্ষম হয়। আসামী গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে নিহতের পরিবারে স্বস্থি এসেছে। সেই সাথে পুলিশের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করেছেন বিক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা।