শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর কেন্দ্র পরিদর্শন ॥ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু, অনুপস্থিত ১৪ হাজার ৯৮৮

79
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রশ্নফাঁসসহ সব ধরনের অভিযোগ ছাড়াই সোমবার দেশজুড়ে শুরু হয়েছে দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধে সরকারের নেয়া কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রথম দিন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষা উপমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি বলেছেন, আশা করি এবারের এসএসসি পরীক্ষার মতো এইচএসসিও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। প্রশ্নপত্র ইনশাল্লাহ ফাঁস হবে না। এদিকে প্রথম দিন ২৭ পরীক্ষার্থীর বহিষ্কার ছাড়াও কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল ১৪ হাজার ৯৮৮ জন। দুই হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এবার পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ পরীক্ষার্থী। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৮ বোর্ডের এইচএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র (ডিআইবিএস) এবং মাদ্রাসার আলিমে কোরান মাজিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় সকালে বাংলা-২ (নতুন সিলেবাস), বাংলা-২ (পুরাতন সিলেবাস), বিকেলে বাংলা-১ (সৃজনশীল নতুন সিলেবাস), বাংলা-১ (সৃজনশীল পুরাতন সিলেবাস) এবং ডিপ্লোমা ইন কমার্সে সকালে বাংলা-২, বিকেলে বাংলা-১ (সৃজনশীল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষাকে নির্বিঘœ করতে ঘোষণা অনুসারে কোচিং সেন্টার বন্ধসহ অন্তত ২২ ধরনের পদক্ষেপের পর শুরু হয় এবারের পরীক্ষা। আগামী ৬ মে পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। প্রশ্নফাঁস ছাড়াই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আশাকরি এবারের এসএসসি পরীক্ষার মতো এইচএসসিও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে, প্রশ্নফাঁসহীনভাবে, নকলমুক্ত হবে। ভালভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও গণমাধ্যমের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা নিয়ে বা প্রশ্নপত্র নিয়ে অনেক রকমের রিপোর্ট হয়। একেকটি পরীক্ষায় হাজার হাজার প্রশ্নপত্র করতে হয়। এত ধরনের প্রশ্নপত্র হয়, সেগুলো ছাপানো ও এগুলোর জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। যিনি প্রশ্ন করেন, যিনি প্রশ্ন মডারেট করেন, ছাপা হওয়ার পরে এটি আর কেউ দেখেন না, বোর্ডের কেউ দেখেন না, মন্ত্রণালয়ের কেউ দেখেন না, এ বিষয়গুলো আসলে জনগণের সেভাবে জানা নেই। এই পরীক্ষা যে সারাদেশে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ সেটিও আমরা অনেক সময় হয়ত তেমনভাবে এ্যাপ্রিশিয়েট করি না বা করতে পারি না। আশাকরি সবার সহযোগিতায় যত বিশাল কর্মযজ্ঞই হোক, সবার যদি সেখানে সহযোগিতা থাকে তাহলে সেই কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।
পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অত্যন্ত সক্রিয়, তারা নজরদারি করছেন, যেমনটা এসএসসিতে করেছিলেন। কেউ যদি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে, গুজব ছড়ানো, প্রতারণা করা, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাব, কোন রকম গুজবে কান দেবেন না। কোন ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি প্রশ্নপত্র ইনশাল্লাহ ফাঁস হবে না এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসমুক্তভাবে, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন সেট নিয়ে সমস্যার মতো পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমস্যা হয়েছিল। পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। আশা করছি এবার কোন সমস্যা হবে না।
আর কোথাও যদি কোন সমস্যা হয় সেটি কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারব সে বিষয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রশ্নপত্রে ক্রটি নিয়ে শিক্ষা বোর্ডে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি রয়েছে, এ ধরনের যখন কোন সমস্যা তৈরি হয় তার জন্য খাতা দেখার সেট পদ্ধতি আছে, সেটি অনুসরণ করা হবে।
কোচিং সেন্টার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৬ মে পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণেই রাখা হয়েছে, বিভিন্ন রকমের কোচিং আছে, যেহেতু এগুলোকে এখন আলাদা করতে পারছি না। কিছু অসাধুচক্র নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নানা রকমের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে যায়, সেজন্য সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। আমি আশা করছি প্রতিটি জেলা-উপজেলা সর্বত্র প্রশাসন, পুলিশ মনিটরিং করবেন এবং এগুলো সত্যি সত্যি বন্ধ থাকছে সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করবেন।
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না, এমন কোন নির্দেশনা আছে কিনা- প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি নিয়ে কাজ করছেন, তারা সেটিকে বাস্তবায়ন করবে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করব, তবে একবারে সবকিছু করা সম্ভব হবে না, পর্যায়ক্রমে আমরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করব।
পরীক্ষা কক্ষে সাংবাদিকদের না যাওয়ার অনুরোধ মন্ত্রীর ॥ বিভিন্ন পরীক্ষার সময় কর্মকর্তা ও সাংবাদকর্মীদের বহর নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কক্ষ পরিদর্শনে করে থাকেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এবার তা হয়নি। আলোচনা-সমালোচনা এড়াতে এবার দলবল ছাড়াই পরীক্ষার্থীদের কক্ষ পরিদর্শন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ সসয় টিভি ক্যামেরাপার্সন ও ফটো সাংবাদিকরা কক্ষ পরিদর্শনের ছবি তোলার জন্য মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর সঙ্গে যেতে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠলেও তাদের থামান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে উপমন্ত্রী এবং কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে কক্ষ পরিদর্শনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সময় উপস্থিত টিভি ক্যামেরাপার্সন, সাংবাদিক এবং ফটো সাংবাদিকেরা তাদের সঙ্গে যেতে চাইলেও থামিয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্লিজ। অপনারা ওদিকে যাবেন না, শুধু বিটিভির ক্যামেরা যাবে, বিটিভি থেকে আপনারা ছবি নিবেন। আপনারা সবাই এখানে থাকুন। আমি পরে কথা বলব।’ এ সময় কেন্দ্রের মধ্যে সাংবাদিকদের জোরে কথা না বলারও অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী। সাংবাদিকদের কয়েকজনও তাদের ক্যামেরাপার্সনদের বলেন, ‘আমরা ভেতরের ছবি নেব না। বাইরের ছবি নেব।’
এরপর শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে শুধু বিটিভির ক্যামেরাপার্সন এবং তথ্য অধিদফতরের (পিআইডি) একজন ফটোগ্রাফার তাদের সঙ্গে কয়েকটি কক্ষ পরিদর্শনে যান।
২৭ বহিষ্কার, অনুপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার : পরীক্ষা থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ২৭ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে কারিগরি বোর্ডেই ২২ জন। এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম ও মাদ্রাসা বোর্ডে একজন করে বহিষ্কার হয়েছে। অনুপস্থিত ছিল মোট ১৪ হাজার ৯৮৮ জন। এর মধ্যে আট বোর্ডের এইচএসসিতে ১০ হাজার ১৬০ জন, কারিগরিতে দুই হাজার ২১৪ এবং মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল ২৬১৪ জন।