উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু, কোচিং বন্ধ

50

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। এতে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ৪০ হাজার ৪৮ বেশি। এবার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৬ ছাত্র, বাকি ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯ ছাত্রী। এদিকে প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অপকর্মে কোচিং সেন্টারের সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপটে পরীক্ষার সময় ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে বলেছেন, দেশে নানান রকমের কোচিং সেন্টার রয়েছে। আইডিয়ালি কী হওয়ার কথা- শুধু যে পরীক্ষা হচ্ছে সে পরীক্ষার কোচিং বন্ধ থাকলে চলত। কিন্তু আমাদের এখানে একই জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রকমের কোচিং হয়, তারপরও আমরা দেখেছি যখন নিষেধ করা হয় তখনও কিছু অসাধু ব্যক্তি নানাভাবে ওই নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে অসাধু উপায় অবলম্বন করেন এবং কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। সে কারণে আমরা বাধ্য হয়েই সকল ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখছি। এইচএসসি পরীক্ষার সময় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হলে অন্য স্তরের শিক্ষার্থীদের যে অসুবিধা হতে পারে সে কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, যারা এইচএসসি পর্যায়ের নন, তাদের হয়ত সাময়িক অসুবিধা হবে, সে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু আরও ভাল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না বলেই বাধ্য হয়ে ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে সকল ধরনের কোচিং সেন্টার আমরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনা করে ভবিষ্যতে আরও ভাল কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, যাতে এক পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলে অন্য স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী জানান, ১ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত হবে এইচএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ১২ থেকে ২১ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। গত বছর ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এই হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। এবার ২ হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণীর এই চূড়ান্ত পরীক্ষা দেবে। গতবারের চেয়ে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১১৮টি, কেন্দ্র বেড়েছে ৩৮টি।
এইচএসসিতে এবার আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৭ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম- এ একলাখ ২৪ হাজার ২৬৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৪৩ জন পরীক্ষা দেবে। ঢাকার বাইরে এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৭৫ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে, এর মধ্যে ১২৭ জন ছাত্র, ১৪৮ জন ছাত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে। অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থীর দেরি হলে রেজিস্ট্রারে নাম, ক্রমিক নম্বর ও দেরির কারণ উল্লেখ করতে হবে। দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে পাঠাবেন। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন একটি ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। ট্রেজারি বা থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-শিক্ষক-কর্মচারীরাও কোন ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
প্রশ্নপত্র বহনের কাজে কালো কাঁচের মাইক্রোবাস বা এ ধরনের কোন যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হবে তার কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষক কোনভাবে পাবলিক পরীক্ষায় বেআইনী কাজ করলে সে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, প্রয়োজনে পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হবে। যদি কোন মোবাইল নম্বরে একাধিকার একই অঙ্কের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে বিষয়টি থানায় জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে এবং আগে-পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সময় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।