জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১শ’ মামলা তদন্তাধীন

45

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঘাপটি মেরে আছে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-শিবিরের প্রায় এক লাখ কর্মী-ক্যাডার। সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী, ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১শ’ মামলা তদন্তাধীন। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাসের তান্ডব চালিয়ে নাশকতার মামলার আসামিরা। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেশ-বিদেশে স্বীকৃত জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডারদের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা সহিংস সন্ত্রাসের অভিযোগ। এসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সংগঠনটির প্রায় লাখ আসামি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আবার জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পৃতা ও মদদদানের অভিযোগ আছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত-শিবিরের প্রাধান্য আছে এমন জেলাগুলোতে আবারও গোপনে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। চলতি বছরের গত দুই মাসে দেশের জামায়াত-শিবিরের প্রাধান্য জেলাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে অর্ধশতাধিক জামায়াত-শিবির কর্মী-ক্যাডার। এদের বিরুদ্ধে মামলা, ওয়ারেন্ট আছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা পলাতক। আবারও গোপনে সংগঠিত হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার খবরে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে এসব নাশকতার মামলায় পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের খুন, পুলিশের ফাঁড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুট, সহিংস সন্ত্রাস হত্যাকান্ড চালানোর অভিযোগে ৩ হাজার ৫শ’ মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার আসামির সংখ্যা লক্ষাধিক। এর মধ্যে বেশিরভাগ আসামিই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সারাদেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১শ’ মামলার তদন্ত এখনও পর্যন্ত শেষই হয়নি। আর এ কারণেই জামায়াত-শিবির মাঝে মধ্যেই সংগঠিত হয়ে সহিংস হত্যাকান্ড চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া নাশকতার সাড়ে তিন হাজার মামলার মধ্যে ১ হাজার ১শ’ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশিরভাগ মামলার আসামিদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি কিংবা আসামিদের নাম ঠিকানা একই হওয়ায় এক জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আসামিদের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে চলতি বছরের মধ্যেই এসব মামলার তদন্ত শেষ করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে এখনও ১শ’ ২৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরে ১শ’ ৭টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় ৩শ’ ৫৬টি, রাজশাহী রেঞ্জে ২শ’ ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২শ’ ৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭৪টি, সিলেট রেঞ্জে ৬৩টি, রংপুর রেঞ্জে ৬৯টি, খুলনা রেঞ্জে ৭৬টি, রেলওয়ে থানায় ৪টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ আসামিই হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী। মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে রেলে নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত ১২৪টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭শ’ ৪১ জনকে। এর মধ্যে ঘটনার কোন সাক্ষী বা তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় দেয়া হয়েছে ১৭টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট। এ ছাড়া নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। নাশকতা চলাকালে বিভিন্ন অভিযানে এজাহারভুক্ত ১শ’ ৫৩ জনসহ মোট ৮শ’ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামির অধিকাংশই এখন জামিন নিয়ে পলাতক। তারা সবাই জামায়াত শিবিরের সদস্য বলে তদন্ত তদারক সূত্র নিশ্চিত করেছে।