অগ্নিঝরা মার্চ

86

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ঐতিহাসিক ২ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ঢাকায় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়, ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আরও বেগবান হয়ে যায় স্বাধীনতা আন্দোলন। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের জারি করা কারফিউ ভেঙ্গে আগের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকা হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয় সারাদেশে। ঢাকা এদিন ছিল হরতাল, মিছিল, এবং কারফিউর নগরী। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দুইজন। প্রতিবাদে ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল ডাকেন বঙ্গবন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এদিন প্রতিবাদী জনসভা আয়োজন করে ছাত্রলীগ। সকাল থেকেই মিছিল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়মুখী। স্মরণকালের বিশাল ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই দিন। উপস্থিত হন লাখও ছাত্র জনতা। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব দৃশ্যের। লাল, সবুজ, সোনালী তিন রঙের পতাকাটি সেই যে বাংলার আকাশে উড়ল তা আর নামাতে পারেনি পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী ও সরকার। সমাবেশ থেকে ছাত্ররা মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে বাংলাদেশের নতুন পতাকা উড়িয়ে দেন। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ের পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা করা হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকেরা কারফিউয়ের বিরুদ্ধে প্রবল স্লোগান তুলে কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়। ডি.আই.টি এভিনিউর মোড়, মনিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিশাল এক জনস্র্রোত কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউসের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে। সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে পরবর্তীতে স্বাধীন দেশ পায় বাঙালী জাতি। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলন বেগবান হয়। এইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করা হয় স্বাধীনতার প্রস্তাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধ্যায় তার প্রেস কনফারেন্সে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে বারবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করছিলেন। পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে হাজার-হাজার মানুষ রাস্তায় প্রতিদিন মিছিল করতে থাকে। মিছিলে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ৭ই মার্চ জনসভার ডাক দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। এই দিন চট্টগ্রাম শহরে হরতাল পালিত হয়। বিকেলে লালদীঘিতে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশ হয়। এই সমাবেশে পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। স্বাধীনতাকামীদের হুংকারে চট্টগ্রামের আকাশ কেঁপে উঠে।