আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নজরদারির নির্দেশ ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কোন আইএস জঙ্গিকে ঢুকতে দেয়া হবে না

31

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগদানকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশসহ বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এ জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কঠোর নজরদারি করবে গোয়েন্দা সংস্থা। আইএসে যোগদানকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক শামীমা বেগমের পর এখন আবার আনোয়ার মিয়া নামের এক আইএস চিকিৎসক যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আইএসে যোগদানকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে না দিলে বংশোদ্ভূতের দাবিদার হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তাদের ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া আইএসে যোগদানকারী আইএস যোদ্ধারা আটকা পড়েছে সিরিয়ার বন্দী শিবিরে। এর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের আইএস যোদ্ধা ছাড়াও বাংলাদেশে আইএস যোদ্ধা আছে কিনা সে বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানী ঢাকার গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা ফিরে আসেনি তাদের কেউ কেউ সিরিয়া-ইরাকে গিয়ে থাকলে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা থেকে যখন খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে তখনই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ফিরে আসার আবেদন জানানোর আগ্রহের খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আনোয়ার মিয়া নামের এক আইএস চিকিৎসক এখন ব্রিটেনে ফিরতে চান বলে খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল। এখন যে কোন শর্তে যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান আনোয়ার মিয়া। ইসলামিক স্টেটের জিহাদীদের চার বছর চিকিৎসা দিয়ে এখন সিরিয়ায় বন্দী শিবিরে আছেন তিনি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফার্মাসিস্ট ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আনোয়ার মিয়া ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সিরীয় স্ত্রী আর দুই সন্তানকেও ব্রিটেনে নিয়ে যেতে চান তিনি।
সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে থাকা শামীমা বেগম নামের আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিশোরী সম্প্রতি তার সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আইএসে যোগ দেয়ার জন্য শামীমা বেগম। তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আবদনে সাড়া না দিয়ে উল্টো তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার নোটিস দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। শামীমা বেগম এখন সিরিয়ার বন্দী শিবিরে এক সন্তান নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। সিরিয়া-ইরাকে আইএসের পতন মুহূর্তে স্ব স্ব দেশে ফিরে যেতে চান আইএস যোদ্ধারা। এর মধ্যে শামীমা বেগম, আনোয়ার মিয়াও আছেন।
আইএস যোদ্ধা আনোয়ার মিয়া ২০১৪ সালে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে থাকতেন বার্মিংহামে। ভুয়া কর্মীর নাম সৃষ্টি করে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করে বাড়তি টাকা আয়ের অভিযোগে তার আগের বছর তার ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স বাতিল করা হয়। সিরিয়া গিয়ে ইসলামিক স্টেটের কথিত খিলাফতে আনোয়ারের নতুন নাম হয় আবু ওবাইদা আল-ব্রিটানিয়া। আইএসের অধীনে মায়াদিন শহরে তিনি চার বছর অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ডিগ্রী না থাকলেও বই পড়ে তিনি ডাক্তারি শিখেছেন বলে তার দাবি। আনোয়ার মিয়া দাবি করেছেন, তিনি কখনই আইএসের অনুগত ছিলেন না; তিনি অবৈধভাবে সিরিয়া গিয়েছিলেন মানবিক কারণে। যুুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল লিখেছে, গত অগাস্টে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর নয় মাসের মেয়েকে নিয়ে একটি মোটরবাইকে মায়াদিন থেকে পালানোর সময় ইরাক সীমান্তের কাছে কুর্দী বাহিনীর হাতে আটক হন আনোয়ার মিয়া। পরে সিরীয় বাহিনী তার স্ত্রী ও মেয়েকে সরিয়ে নিলে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। ফলে দ্বিতীয় সন্তানকে কখনও দেখেননি তিনি। তার স্ত্রী-সন্তানরা এখন কোথায় আছে তিনি জানেন না। আনোয়ার মিয়ার দাবি, তার সন্তানরা বাবার সূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক, তাদের নিয়ে তিনি ব্রিটেনে ফিরে যেতে চান।