কুলাউড়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হয়রানি ও ভয়ভীতির অভিযোগ

35

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার জেলায় চলমান মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় কুলাউড়া কেন্দ্র-১ এর সহকারী সচিব ও কুলাউড়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদেরকে নানাভাবে মানসিক হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক দিপালী বেগম গত ১০ ফেব্র“য়ারী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কেন্দ্র সচিব মো. আমির হোসেনের বরাবরে।
এছাড়াও এর আগেরদিন ৯ ফেব্র“য়ারী কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও অভিভাবক শামীম আহমদ চৌধুরী,অভিভাবক সাথী রাণী দেব একই কেন্দ্র সচিব মো. আমির হোসেন বরাবরে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন।
মানসিক হয়রানীর কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে এসব পরীক্ষার্থীরা অনীহা প্রকাশ করছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
জানা যায়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কেন্দ্র-১ (নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে মোট ২ হাজার ১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। তার মধ্যে কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। আর নবীন চন্দ্র মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন।
তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, কুলাউড়া পরীক্ষা কেন্দ্র -১ এর উপকেন্দ্র কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অংশ গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। এই কেন্দ্রে সহকারী কেন্দ্র সচিব ও একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন এই পরীক্ষার্থীদের নানা ভাবে মানসিক হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন।
সাবেক পৌর কাউন্সিলর শামীম আহমদ চৌধুরী অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে ওই কেন্দ্রের ১৮নং কক্ষের একজন পরীক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের এন.সি স্কুলের শিক্ষক আমার স্কুলের পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন। আমিও তোমাদের বহিষ্কার করে ছাড়বো। এমনকি দায়িত্বরত শিক্ষককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথাবার্তা বলেন। এমতাবস্থায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছে এবং অনীহা প্রকাশ করছেন। এছাড়াও অভিভাবক সাথী রাণী দেব বলেন, আমার মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নানা রকম কটাক্ষ ও নাজেহাল করছেন। এতে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সে পরীক্ষা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।
এদিকে দিপালী বেগম অভিযোগে উল্লেক করেছেন, প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করছে। কেন কান্নাকাটি করছে জানতে চাইলে সে বলে, আমার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, তাকে বহিষ্কার করবেন, তার ঘাড় ধরে বের করে দিবেন, তারা কি করে ভালো পরীক্ষা দিবেন তিনি দেখে ছাড়বেন।
শিক্ষক আব্দুল মতিন আমার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, এই মেয়ে তোমার এতো লিখতে হবে না, তুমি তো এমনিতেই এ প্লাস পেয়ে যাবে। এ রকম কথাবার্তা বলার কারণে আমার মেয়ের হাত-পা কাঁপতে থাকে। সে ভয়ে লিখতে পারে না। সে বাকি পরীক্ষা গুলো দিতে ভয় পাচ্ছে।
পরীক্ষার্থীদের অভিাভাবক শামীম আহমদ চৌধুরী, দিপালী বেগম ও সাথী রাণী দেব বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার ব্যাপারে শঙ্কিত আছে। ইংরেজী প্রথম পত্রের পরীক্ষায় কুলাউড়া বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নকলের দায়ে নবীন চন্দ্র মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিষ্কার করা হয়। এরই জের ধরে এনসি স্কুলের পরীক্ষার্থীদের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নানাভাবে হয়রানী করছেন শিক্ষকরা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব মো. আমির হোসেন বলেন, কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আরও অনেকগুলো মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলাচনা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আনোয়ার বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, গত ৯ ফেব্র“য়ারি গণিত পরীক্ষার দিন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন পরীক্ষা হলে যাননি। তাছাড়া তিনি কখনো পরীক্ষা হলে যাননা। আমিও ওই দিন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। কেন্দ্রের সহকারি সচিব হিসেবে পরিক্ষার হল পরিদর্শন উনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ হ্যা এটা অবশ্যই উনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এজন্য তিনি হলের বারান্দায় গিয়ে পরীক্ষার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।’
তিনি বলেন, নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি বেশ কয়েকবার সমাধান করা হলেও কিছুদিন পর আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্র সহকারী সচিব ও কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, এ বিষয়ে আমার হাতে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’