মাসুদ আল রাজী শাবি থেকে :
প্রায় দুই যুগ সময়েও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন হয়নি। ফলে প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে থাকলেও বেরিয়ে আসছে না যোগ্য নেতৃত্ব। রাজনীতিতে আসছে না মেধাবীরা। ছাত্রদের কল্যাণে এখন আর শ্লোগান হয় না। জাতীয় রাজনীতিতে যোগ হচ্ছে না শাবি শিক্ষার্থীদের নাম। তুখোড় রাজনীতিবিদ তৈরির এই প্লাটফর্মকে সচল করতে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। হচ্ছে হবে করেই দুই যুগ পার হয়ে গেছে। তবে এবার ডাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শাকসু নির্বাচনেরও জোর দাবি উঠেছে। তবে শাবি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডাকসু নির্বাচন শেষ হলে আমরাও নির্বাচনের উদ্যোগ নেব। নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ ও প্রস্তুতি দুটোই আছে। যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে।
সিলেট অঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ বছর আগে ১৯৯৭ সালের ২৫ই আগষ্ট ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। এই নির্বাচনে ছাত্রদলের পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হয়। ভিপি নির্বাচিত হন কামরুল হাসান কাবেরী ও জিএস নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নির্বাচনের পর বেশীদিন সচল থাকেনি ছাত্র সংসদ। দায়িত্বশীলদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ও কর্মজীবনে প্রবেশের কারণে বছর দুয়েক পরেই ঝিমিয়ে পড়ে রাজনীতিবিদ হওয়ার এই প্লাটফর্ম। এরপর আর নির্বাচনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার পেছনে কারণ হিসাবে রয়েছে দুই প্রধান ছাত্র সংগঠনের অন্তর্কোন্দল।
সুত্র জানায়, শাবি ক্যা¤পাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত। এছাড়াও রয়েছে গ্র“পিং। দুই বছর আগে যেখানে শুধু ছাত্রলীগের দুটি গ্র“প ছিল, বর্তমানে সেখানে ছাত্রলীগের সাতটি গ্র“প আছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শাবি প্রশাসনও দিশেহারা।
সর্বশেষ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০২ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি। এই কমিটির মধ্যে সাংগঠনিক স¤পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রাজু ব্যতিত কারোরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব নেই। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে আর কেউ নির্বাচিত হননি। পরবর্তীতে যে কমিটিগুলো এসেছে সে সবগুলোই কেন্দ্র থেকেই ঘোষিত।
এদিকে শাবি ছাত্রদল বিভিন্ন গ্র“প-উপগ্র“পের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত। সংঘাত সহিংসতায় ছাত্র রাজনীতির বলি হয়েছেন অনেকেই। ফলে দুই প্রধান ছাত্র সংগঠনের অস্থিতিশীলতার কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোন পরিবেশ ছিল না। শাবিপ্রবির ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ফলে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই জরুরি। এই সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। সরকারের আমলে সিলেটের মন্ত্রী এমপিদের প্রচেষ্টায় শাবিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ছাত্র সংসদ থাকলে বিভিন্ন কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা বৃদ্ধি পেত। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি দাওয়াগুলো পূরণের অন্যতম মাধ্যম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।
শাবি ছাত্রদলের সভাপতি এম এ রাকিব বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও আগামীর নেতৃত্বের কথা চিন্তা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া জরুরি। তবে তার চেয়ে বেশী দরকার রাজনীতিতে সহাবস্থান ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। সহাবস্থান তৈরির পরে ছাত্র সংসদ গঠিত হলে এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজে লাগবে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেহেদি জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে যেমন সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট একটি গন্ডির ভেতরেও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নেই সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে আমি মনে করি, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরী।
শাবিপ্রবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক জুবায়ের বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় দেশে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকছে, তখন সেই দলের ছাত্র সংগঠনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে একটি দখলদারিত্বের পরিবেশ তৈরি করে রাখছে। এর মধ্যে দিয়ে ছাত্রদের অধিকার আদায় কিংবা মত প্রকাশ করার কোন জায়গা থাকছে না।
এ ব্যাপারে শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরাও চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। নির্বাচন না হওয়ায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে না। রাজনীতিতে মেধাবী ছাত্ররা আসছে না। দু:খজনক হলেও সত্যি, এখন আর ছাত্রদের কল্যাণে শ্লোগান হয়না। শ্লোগান হয় দলীয় স্বার্থ আদায়ে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। তবে, ডাকসু নির্বাচনের পরে আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের একটা দাবি উঠেছে। আমাদের প্রস্ততিও আছে। যেকোন সময় নির্বাচন হতে পারে।