মন্ত্রী সভার প্রথম বৈঠকে মন্ত্রীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ সততা রেখে চলবেন ॥ বিত্তবৈভব অনেক করা যায় কিন্তু তাতে পচে যাবেন

225
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী পরিষদ সভা কক্ষে মন্ত্রী পরিষদের প্রথম বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে নতুন সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সব মন্ত্রীকে নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়নে শুরু থেকে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর সোমবার মন্ত্রী সভার প্রথম বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকাল ১০টায় এ বৈঠক শুরু হয়। প্রথম দিনের কার্যসূচীতে আলোচনার জন্য ছয়টি বিষয় রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং তিন উপমন্ত্রীকে নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রী সভা সাজিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে আকাক্সক্ষা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল, আমাদেরও সেই আকাক্সক্ষা। সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করব। একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। মন্ত্রী সভার সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন, আমার দাদা তাকে যে কথাটা বলেছিলেন; যে কাজই কর না কেন, সিনসিয়ারিটি অব পারপাস এ্যান্ড অনেস্টি অব পারপাস।
আমি মনে করি এই দুটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্ত্রী পরিষদ এই কথাটি মনে রেখে যে কাজই করবেন, নিষ্ঠার সঙ্গে ও সততার সঙ্গে কাজ করবেন। প্রতিটি কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে- এ কথাটি মনে রাখতে হবে। জনগণের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে- সেটা পালন করতেই আমরা এখানে এসেছি। একই সঙ্গে নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা মাথায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। যার যে মন্ত্রণালয় আছে, সেখানে যে সব নির্বাচনী এজেন্ডা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে শুরু থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সততার শক্তি অপরিসীম, সেটা আমরা বারবার প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বৈঠকের পর অনির্ধারিত এক আলোচনায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগের মন্ত্রী সভার অনেক বড় পরিবর্তন এনে নতুন মন্ত্রী সভা করেছি। এর আগে কোন মন্ত্রী সভায় এত বড় পরিবর্তন আসেনি, কেউ এত বড় পরিবর্তন করেনি। আমি নতুনদের মন্ত্রী সভায় এনেছি। আপনাদের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে মন্ত্রী সভায় এনেছি, আশা করি, আপনারা সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রমাণ করবেন যে, আপনাদের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস সঠিক ছিল। যদি সেটা না করতে পারেন তবে আমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। অনেকে নানা কথা বলবে, শুনতে হবে, অনভিজ্ঞদের নিয়ে আসার কারণে এটা হয়েছে। এ কারণে আপনারা সততা রেখে চলবেন। বিত্ত, বৈভব অনেক করতে পারবেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে পচে যাবেন।
সৈয়দ আশরাফের স্মৃতিচারণে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতিচারণে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ আমাদের মাঝে নেই, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশরাফকে ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি, কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সে ছাত্রলীগ করত। আমাদের মধ্যে একটা পারিবারিক সম্পর্কের মতোই ছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মন্ত্রী পরিষদের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।