কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একটি অংশ চাচ্ছে এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে। আর অপর অংশটি চাচ্ছে নির্বাচনে গিয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ না করে এতে অংশ না নিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে। তবে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। দলীয় হাইকমান্ড ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না দিলেও তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচন করতে চায়।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মার্চ মাসের প্রথম ভাগ থেকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে। সারাদেশের ৪৯২ উপজেলায় কয়েক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর জুনের আগেই সকল উপজেলায় নির্বাচন শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ জন্য কমিশন প্রস্তুতি শুরু করেছে। শীঘ্রই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন থেকে উপজেলা নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে। রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় বিধায় এ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায়। তাই সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির তৃণমূল নেতারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে দলের সিদ্ধান্ত কি জানতে চায়। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে। বিশেষ করে বর্তমানে যেসব বিএনপি দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছে তরা আসন্ন নির্বাচনে আবারও অংশ নেয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠিক হবে কি হবে না এ নিয়ে সম্প্রতি অন্তত ৩টি বৈঠক করে দলের সিনিয়র নেতারা। কিন্তু এসব বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি তারা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির কারণে দলের অধিকাংশ নেতাই এ সরকারের অধীনে আপাতত কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে মত দেন। আর দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে মত দেয়া বিএনপি নেতাদের যুক্তি হচ্ছে- আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। এ ছাড়া মাত্র ৮টি ছাড়া সকল সংসদীয় এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করবে। আর পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজনও সরকারী দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তাই এ অবস্থায় নির্বাচন করে শোচনীয় পরাজয়বরণের চেয়ে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে পারলে ভবিষ্যতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
আর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দেয়া বিএনপি নেতাদের যুক্তি হচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ও আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তখনও প্রশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারী দলের পক্ষে কাজ করেছেন। তারপরও বিএনপি ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে দেড়শতাধিক উপজেলায় বিজয়ী হয়েছে। আর এবার নির্বাচন করে যদি ১০০ বা তারচেয়ে কিছু কম উপজেলাও বিজয়ী হওয়া যায় তারপরও নির্বাচনে যাওয়া উচিত। কারণ, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে সারাদেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে। আর তা না হলে তারা আরও বেশি হতাশ হয়ে এক সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। কেউ কেউ দলও পরিবর্তন করবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিলে ফল যাই হোক নির্বাচনে অংশ নেয়াই শ্রেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দল অংশ নেবে কি নেবে না এ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই সিনিয়র নেতাদের কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর কেউ কেউ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে না যাওয়া ঠিক হবে না বলে যুক্তি দেখান। এ বিষয়ে আরও কয়েক দফা বৈঠক হবে।