কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলে ক্ষুব্ধ বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, এ নিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। মার্চে অনুষ্ঠেয় এই ভোটে যাওয়ার পক্ষে মত যেমন আছে, তেমনি আছে বর্জনের চিন্তাও।
এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতারা এখানো নিস্পৃহ ভাব দেখাচ্ছেন।
৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপির একটি অংশ বলছে, উপজেলা নির্বাচনে গেলেও একই পরিণতি হবে। কাজেই ভোটে যাওয়ার মানে হয় না। অন্য একটি পক্ষ বলছে, স্থানীয় নির্বাচনে না গেলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হবে। তারা কোনো পক্ষে চলে গেলে পরে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ওই বছরই কয়েক ধাপে হওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রথম দুই ধাপে আওয়ামী লীগের তুলনায় বেশি উপজেলায় জয়ও পায় তারা। তবে তৃতীয় থেকে পঞ্চম ধাপে একাধিপত্য দেখায় ক্ষমতাসীন দল। এই ধাপগুলোতে কারচুপির অভিযোগ করে বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। বিপুল প্রার্থী বিজয়ী হলেও বিপুলভাবে মামলা খেয়েছেন তারা। আবার বিপুলভাবে বরখাস্তও হয়েছেন। এবার জাতীয় নির্বাচনে যে বিশাল নাটক হয়ে গেল, এরপর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
দলীয় ফোরামে এখনো কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন আলোচনা হচ্ছে। তবে শিগগিরই নীতিনির্ধারকরা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
যারা উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে, তারা বলছেন, ২০১৪ সালে যখন উপজেলা নির্বাচন হয়, তখনকার পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের মতো ছিল না। তবে এবার সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচনেও বিএনপির ভরাডুবি ঘটানোর চেষ্টা করবে সরকার।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংলাপে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আওয়ামী লীগের এইচ টি ইমাম তো বলেই দিয়েছেন, সামনের সব নির্বাচন এভাবেই হবে। এভাবে ইলেকশন হলে সে ক্ষেত্রে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও সংলাপে আলোচনা হবে।’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। কেন্দ্র থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে সংসদ নির্বাচনে যা দেখলাম, তারপর আর নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে কি না তা ভাবতে হবে।’
অন্যদিকে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মত আসছে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, এখনো জানি না। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া সমান জেনেও আমাদের অংশ নেওয়া উচিত। এতে বিশ^বাসীর সামনে সরকারের মুখোশ আরও তুলে ধরা যাবে।’
নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের একটু চাঙা রাখার সুযোগ আছে বলেও মনে করেন এই নেতা।
তবে বিএনপির নেতা আলাল বলেন, ‘নির্বাচনে গেলেও জেলে যেতে হয়, না গেলেও জেলে যেতে হয়। বরখাস্ত করা হয়। ফলে নির্বাচিত হলেও কোনো কাজ করতে পারেননি জনপ্রতিনিধিরা। তাহলে সেই নির্বাচনে গিয়ে লাভ কী?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখন আমরা জাতীয় নির্বাচনের অনিয়ম, কারচুপির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। এখনো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যেহেতু হাতে সময় আছে, সে ক্ষেত্রে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।