কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এবার সরকার গঠন করে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন করবে। প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনের প্রতিভার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে চমক সৃষ্টির মতো করা মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবাসী নতুন বছরে মহাবিজয় অর্জনকারী মহাজোটের নতুন সরকার উপহার পাবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েই বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এর পর বৈঠক করেন তারা। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, একাদশ জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি জানান, আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন। শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই বিভাগ থেকে জানা যায়, ৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সাক্ষাত। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বশেষ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তিনি। এবার নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে এককভাবে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে মাত্র সাতটি আসন পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ী মেয়াদের সরকারে মন্ত্রীর সংখ্যা অর্ধশতের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছিল। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা কত হবে, সে বিষয়ে কোন আভাস পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিধস বিজয়ের কারণে এবার মন্ত্রিসভার আকার কিছুটা বাড়তে পারে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় নতুনদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, পরের মেয়াদে তিনি মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে এনেছিলেন প্রবীণ নেতাদের অনেককে।
এবার কী করবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এটা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার।
ভূমিধস বিজয়ের পর ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কাজে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনদের মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে শেখ হাসিনা তৈরি করছেন নতুন মন্ত্রিসভা। এক্ষেত্রে অনেক সিনিয়র নেতা যেমন বাদ পড়ার আভাস পাওয়া গেছে তেমনি চমক দেয়ার মতো বেশ কিছু নবীন সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
দিন বদলের সনদের পর এবার সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ স্লোগান সামনে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশবাসীর ঐতিহাসিক গণরায়ের প্রতি সম্মান রেখে সম্ভাব্য মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রী নামক সোনার হরিণ কপালে শেষ পর্যন্ত জুটবে কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেমন রয়েছেন টেনশনে তেমনি ওই সোনার হরিণটি পেতে নবীন-প্রবীণ সংসদ সদস্যরা লবিং, ধর্ণা দিচ্ছেন প্রকাশ্যেই। মন্ত্রিপরিষদে কাদের রাখা হচ্ছে তা নিয়ে কেবলমাত্র দলের প্রবীণ কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলছেন ভাবি প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পর পরই শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথের আগে সকাল থেকেই তালিকায় স্থান পাওয়া ভাগ্যবান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের টেলিফোন করে শপথ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে আসার আমন্ত্রণ জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তাদের বাসা-বাড়িতে পাঠানো হবে মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ সরকারী গাড়ি। ফ্ল্যাগবিহীন গাড়িতে চড়ে বঙ্গভবনে শপথ নেয়ার পর ফ্ল্যাগ উড়িয়ে বের হবেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা।