শনিবার রাজধানী ঢাকার টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠে হামলা ও হতাহতের ঘটনাকে তাবলীগ জামাতের কালো অধ্যায় আখ্যা দিয়ে সিলেটের উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগ জামাত খোজারখলার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা তিন দাবি উত্থাপন করেছেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, উগ্র সাদপন্থীদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোড় ও ১৭ থেকে ২৫ জানুয়ারী পূর্ব নির্ধারিত বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সরকারের সহযোগিতা প্রদান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা মকবুল আহমদ বলেন, যুগ যুগ ধরে তাবলীগ জামাতের কাজ স্বমহিমায় চলে আসছে। তাবলীগ জামাতে কোন দ্বিধাবিভক্তি ছিল না। বর্তমানে বিভক্তি ও হতাহতের ঘটনা ইসলাম বিদ্বেষী চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি। এমন পরিস্থিতির জন্য ভারতের মৌলভী সাদ একতরফাভাবে দায়ী।
তিনি বলেন, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.) এবং মাওলানা ইন’আমুল হাসান (রহ.) পদ্ধতি অনুসরণ করে এ কাজ করলে তাবলীগ জামাতের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, তাবলীগ জামাত সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেমগণের দিকনির্দেশনায় পরিচালিত বিশ্বব্যাপি শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। সমস্ত দুনিয়ায় মহান আল্লাহর দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ঈমানী ঐক্যের হাল ধরে আছে তাবলীগ। তাবলীগ জামাতকে কলুষিত করতে একটি শ্রেণি উঠে পড়ে লেগেছে।
মুহিববুল হক বলেন, বিতর্কিত ব্যক্তি ও ইসলামের দুষমনদের দোসর ভারতে মাওলানা সাদ কান্দলবী নিয়মবহির্ভূতভাবে হঠাৎ নিজেকে এই মোবারক জামাতের আমীর দাবি করে বসেন। এহেন দাবি ইসলাম সমর্থন করে না। এছাড়া তিনি স্বঘোষিত আমীর হয়েই তার মনগড়া মতে তাবলীগ জামাতকে পরিচালনা করতে শুরু করেন। নানান বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা ছাড়া মানুষের ঈমানকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সাদের ভ্রান্ত মতবাদ থেকে উম্মাহকে ফেরাতে দেশবিদেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বিশেষ করে দারুল উলুম দেওবন্দ এর অনুসারী উলামা মাশায়েখ এগিয়ে আসেন। উলামায়ে কেরামের এই এগিয়ে আসাকে সাদ পন্থিরা মেনে নিতে পারেনি। তাই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে খুন ও জখম করেছে।
সাদ পন্থীদের বেশ কয়েকটি ভ্রান্ত মতবাদের রয়েছে। তাদের ভ্রান্ত ধারণা মতে তাবলীগ ছাড়া কোন তাওবা কবুল হয় না। পকেটে ক্যামেরা মোবাইল থাকলে নামাজ কবুল হবে না। সাদ সাহেবকে আমীর মানা ফরজ। না মানলে হত্যা করা ওয়াজিব- ইত্যাদি।
ভারতের মৌলভী সাদপন্থীরা এহেন উগ্র মতবাদের প্রমাণ হয় গতকাল টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে। তারা ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন একটি মাদরাসায় অধ্যয়নরত হিফজের শিক্ষার্থীদের উপরও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। ছাত্ররা প্রাণে বাঁচার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে যারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। আহত হয়েছেন তাবলীগের সাথী ও মাদরাসার কয়েক শ’ শিক্ষার্থী। তারা প্রশ্ন রাখেন- সাদ পন্থীরা কী অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তাবলীগ প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, টঙ্গী মাঠের নির্মম ট্র্যাজেডির মদদদাতা ও ঘটনার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ওয়াসিফ, এরতোজা, উসামা, নাসিম, সিলেটের সুয়েজ আফজাল খান ও মাওলানা আব্দুল করিমসহ চিহ্নিত সাদপন্থী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ঘটনার ইন্দনদাতা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। আধ্যাত্মিক রাজধানি সিলেটে যেনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেদিকে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি কামনা করেন। বিজ্ঞপ্তি