ক্রীড়াঙ্গন রিপোর্ট :
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় নেই। সেই সুযোগ এবার ধরা দিয়েছে। মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংসে হারানোর সম্ভাবনা জেগেছে। এখনও ফলোঅন এড়াতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের লাগবে ২৩৪ রান। প্রথম ইনিংসে হাতে আছে ৫ উইকেট। যেভাবে দ্বিতীয়দিন সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণিতে ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছেন, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅনে ফেলার সম্ভাবনাও জোরালো হয়ে উঠেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে গড়া ৫০৮ রানকেই যদি টপকাতে না পারে তাহলেই ইনিংস ব্যবধানে জিতবে বাংলাদেশ। সেই জয় মিললে ইতিহাস গড়ে ফেলবে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত ১৮ বছরে ১২টি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কখনই এমন সুখস্মৃতি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হয়নি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুঃখস্মৃতি দিয়ে দিতে পারলেই হলো। সেই ভিতও মজবুতই আছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের টেস্ট ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রানের ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করেছে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয়দিন শেষ হওয়ার আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরাজ (৩/৩৬) ও সাকিব (২/১৫) মিলে মুহূর্তেই ৫ উইকেট তুলে নেন। এরপর হেটমায়ার (৩২*) ও ডওরিচ (১৭*) মিলে দলকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। আজ ম্যাচের তৃতীয়দিন। দ্বিতীয়দিনের শেষভাগে এসে যেভাবে বল ঘুরেছে, নিচু হয়ে ব্যাটসম্যানের কাছে এসেছে; তাতে তৃতীয়দিনেতো সাকিব, মিরাজ, তাইজুল, নাঈমরা আরও আতঙ্ক ছড়াবেন। সেই আতঙ্কে হেটমায়ার ও ডওরিচের উইকেট দ্রুত তুলে নেয়া গেলেই হয়ে যায়। এরপর বিশু, রোচ, ওয়ারিক্যান ও লুইস আছেন। যারা সবাই বোলার। সাকিব ও মিরাজের স্পিন জাদুর সামনে পড়ে ব্রেথওয়েট (০), পাওয়েল (৪), এ্যামব্রিস (৭), হোপ (১০), চেসের (০) মতো ব্যাটসম্যানদেরই মাথা ঘুরে গেছে। ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে হেটমায়ার, ডওরিচ আউট হওয়ার পর বোলাররা আর কতদূর দলকে নিয়ে যেতে পারবেন?
সাকিব, মিরাজ, তাইজুল, নাঈমরাতো আজ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন। তাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅনে ফেলে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠানো গেলেই হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নবেম্বরেই জিম্বাবুইয়েকেও ইনিংসে হারানোর সুযোগ বাংলাদেশের সামনে ছিল। জিম্বাবুইয়ে ফলোঅনেও পড়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং এড়াতে আবার ব্যাটিংয়ে নামে। সেই সময় প্রথম ইনিংস শেষে জিম্বাবুইয়ে থেকে ২১৮ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। উইকেটে ব্যাটসম্যানরাও রান পাচ্ছিলেন। স্পিন সেভাবে দ্বিতীয়দিন থেকেই ধরছিল না। তাই আর ঝুঁকিতে না গিয়ে বাংলাদেশ আবার ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দ্বিতীয়দিন শেষেই বোঝা যাচ্ছে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অনেক রানে এগিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া উইকেটও যেহেতু স্পিন বোলারদের পক্ষই নিচ্ছে, তাই ২৫০ রানেও যদি এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ তাহলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅন করানো যাবে। তা করালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাকি থাকা রান না করতে দিলেই ইতিহাস রচনা করবে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম টেস্ট জেতার পর মিরপুর টেস্টেও জয় মিলবে এবং এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে যে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ, সেই হারের প্রতিশোধও নেয়া হবে। জিম্বাবুইয়ের পর দেশের মাটিতে কোন দলকে টেস্ট সিরিজে হারানোর সঙ্গে হোয়াইটওয়াশ করার মধুর স্বাদও নেবে বাংলাদেশ।
প্রথমদিনই আসলে বাংলাদেশ ভাল অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিল। ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করেছিল। দ্বিতীয়দিন আরও ২৪৯ রান করে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। সাকিব ২০ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে লিটন কুমার দাস আবার দলে ফিরে খেলার সুযোগ পেয়েই ৫৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। মিরাজও (১৮) চেষ্টা করেন। তাইজুল (২৬), নাঈমতো (১২*) ব্যাটসম্যানদের মতোই আবারও নিজেদের উপস্থাপন করেন। এ ইনিংসে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়। যা বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসেও প্রথমবার ঘটেছে। তবে একজন পৌঁছান তিন অঙ্কের ঘরে। তিনি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মিরপুর স্টেডিয়ামে সর্বশেষ টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও করলেন সেঞ্চুরি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির আগে একটি সেঞ্চুরিই ছিল মাহমুদুল্লাহর। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। আট বছর ধরে কোন সেঞ্চুরি পাননি। যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মিরপুর স্টেডিয়ামে টানা দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেন।
তৃতীয় সেঞ্চুরিটি করে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসও খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। ২৪২ বলে ১০ চারে ১৩৬ রানের ইনিংস উপহার দেন। প্রথমদিনের ৩১ রানের সঙ্গে দ্বিতীয়দিন আরও ১০৫ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। তার এই ইনিংসে নবমবারের মতো ৫০০ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমাও করে বাংলাদেশ। এই স্কোরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে পাহাড়সম হয়ে দাঁড়ায়। এত রান করাতেই এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংসে হারানোর সম্ভাবনা জেগেছে। শেষ পর্যন্ত তা করতে পারলেই প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসও গড়বে বাংলাদেশ। সেই ইতিহাসই ডাকছে বাংলাদেশকে।