কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে ২৫টি আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে তার অন্তত ১৪টিতে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়ে জামায়াতে যেমন অস্বস্তি রয়েছে, আসনগুলোতে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি নেতাদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। কেন্দ্র থেকে ছাড় দেয়া হলেও স্থানীয় কিছু আসনে ছাড় দিতে নারাজ তারা। এর মাঝেই বিএনপির কাছে আরও কিছু আসনও দাবি করেছে জামায়াত।
আবার বিএনপির কাছ থেকে ছাড় না পাওয়া গেলেও আরও ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। এ নিয়েও জোটে আছে ক্ষোভ। এই ৪৩টি আসন নিয়ে আবার আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
গতকাল বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটাও ছাড়ি নাই, কিংবা একটাও ধরি নাই। কারণটা হচ্ছে, আমরা প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছি। আমাদের ২০ দলের মধ্যে যারা নিবন্ধিত পার্টি, তাদের মনোনয়ন তারাই দিয়েছেন। যারা নিবন্ধিত না, তাদের ব্যাপারটায় আমরা চিঠি দিয়েছি।’
নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামীর র্প্রার্থীরা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে শুরুতে বিএনপির কাছে ৫০টি আসন দাবি করে। পরে চাওয়া কমিয়ে কমিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ করা হয়। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ২৫টি আসন দেয়া হয় তাদের। তবে এর মধ্যে বাকি ১৩টিতে নিজেদের এবং একটিতে অন্য শরিকের প্রার্থী দিয়ে রেখেছে বিএনপি।
তবে জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৫৪টিতে। এর মধ্যে ২৯টিতে স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রার্থিতা জমা দেয়া হয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে খুলনা-৬ আসনে ছাড় দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে মনোনয়ন দাখিলও করেছেন তিনি। একই আসনে বিএনপির দুই নেতাও মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এ নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন তিনি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা সাপেক্ষেই ২৫টি আসন জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমরা ২৫টি আসনেই ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। এসব আসনে আমরা আর আশঙ্কা রাখব না।’
যেসব আসন নিয়ে ঝামেলা
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে খুলনা-৫ আসনে ছাড় দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। অথচ এ আসনে বিএনপি মামুন রহমান ও গাজী আবদুল হককে দিয়েছে মনোনয়নের চিঠি।
দিনাজপুর-১ আসনে জামায়াতের মোহাম্মদ হানিফকে মনোনয়ন দেয়া হলেও একই আসনে দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। তারা হলেন মনজুরুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ চৌধুরী।
মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যাশা নিয়েই মনোনয়ন দাখিল করেছি। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোধ করছি’।
দিনাজপুর-৬ আসন জামায়াতের আনোয়ারুল ইসলামকে ছাড় দেয়ার কথা বলা হলেও সেখানে বিএনপির চিঠি পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহীনুল ইসলাম।
জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় বিব্রতবোধ করার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতারা। লুৎফর রহমান বলেন, ‘কেন তাদের ছাড় দেয়া হলো-তা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ এটা ভালোভাবে নিচ্ছে না। জামায়াতের প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আওয়ামী লীগের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাকে প্রার্থী করা হলে আমি জয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি’।
সিলেট-৬ আসনে সিলেট দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও চিত্রনায়ক হেলাল খান।
ফয়সল বলেন, ‘কোনো সমস্যা না হলে এ আসনে আমিই নির্বাচন করব। অন্য কেউ এখানে নির্বাচন করবে না- এটা মোটামুটি নিশ্চিত।’
ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ছাড় পাবেন বলে দাবি করছে তার দল। এখানে বিএনপির মামুন হাসানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
মামুন হাসান বর্তমানে কারাগারে। তার হয়ে দলীয় সাক্ষাৎকারে গেছেন স্ত্রী ডলি হাসান। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় জামায়াতের কোনো প্রভাব নেই। এখানে তাদের হাতে গোনা কিছু ভোট রয়েছে। যতটুকু জানি ঢাকায় দলটির নেতাদের প্রার্থী করার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর ঢাকা-১৫ তে ডা. শফিকুর রহমানের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। কাজেই এ আসনে মামুন হাসানকেই প্রার্থী করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
পিরোজপুর-১ আসনটি একইসঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে (কাজী জাফর) ছাড় দেয়া হয়েছে। আসনটিতে যুদ্ধাপরাধে দ-িত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী এবং জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নীলফামারী-২ আসনেও জামায়াতের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টুকে ছাড় দেয়ার কথা জানিয়েও বিএনপি মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে শামসুজ্জামান (জামান) ও কাজী আকতারুজ্জামানকে।
রংপুর-৫ আসনে জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানীর পাশাপাশি মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন বিএনপির সোলায়মান আলম ও ডা. মমতাজ।
গাইবান্ধা-১ আসনে ছাড় পাওয়ার আশায় জামায়াতের মাজেদুর রহমান সরকার। এখানে বিএনপির দুই প্রার্থী হলেন খন্দকার আহাদ আহমেদ ও মাহমুদুন্নবী টিটুল।
সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতের রফিকুল ইসলাম খানকে ২০০৮ সালে ছাড় দেয়া হয়নি। পরে তিনি জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান।
এবারও আসনটি দাবি করছে জামায়াত। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন রেজাউল রহমান ও শামসুল আলম।
জামায়াতের প্রার্থী মতিউর রহমান ঝিনাইদহ-৩ থেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করার প্রত্যাশী। এখানে কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও শহিদুল ইসলামকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।
নীলফামারী-৩ আসনে নিজেদের প্রার্থী ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। একই আসন জামায়াতের প্রার্থী আজিজুল ইসলাম।
বাগেরহাট-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ও বিএনপির শেখ ফরিদুল ইসলাম।
বাগেরহাট-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল আলিম। এখানে বিএনপির প্রার্থী খায়রুজ্জামান শিপন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘অনেক আসনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছে, নেতাদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে চাপে পড়ে তাদের এসব আসনে প্রার্থী দিতে হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এসব আসনে একজন প্রার্থীই দেয়া হবে। আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বিষয়টা চূড়ান্ত হবে।’
জামায়াতের যে ১১ আসন নিশ্চিত
জামায়াতের প্রার্থী আছে এমন ১১টি আসনে বিএনপি ও ২০ দলের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এসব আসন নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াত।
আসনগুলো হলো ঠাকুরগাঁও-২, খুলনা-৬, সাতক্ষীরা-৩, সাতক্ষীরা-২, সাতক্ষীরা-৪, সিলেট-৫, কুমিল্লা-১১, কক্সবাজার-২, চট্টগ্রাম-১৫, যশোর-২ ও পাবনা-৫।
জামায়াতকে ছাড় দেয়া ৩৫ আসনের মধ্যে ২০০৮ এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি (চট্টগ্রাম-১৫) ও জামায়াত (কক্সবাজার-২) দুটিকে জেতে।