গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় দুপক্ষের হাতাহাতি, উত্তেজনা, শেষ সময়েও ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রী

72
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত কর্মী সভার পর পুলিশি পাহারায় সভা স্থল ত্যাগ করছেন মন্ত্রী।

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ও ব্যাপক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সভা শেষ হয়েছে। কর্মীসভায় শ্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্র“পের ব্যাপক হাতাহাতির কারণে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েই পুলিশি পাহারায় সভাস্থল ত্যাগ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার এ সভার আয়োজন করেছিল উপজেলা আওয়ামীলীগ। সভাকে কেন্দ্র করে দলটির পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল । তবে শেষ সময়ে এসেও ব্যর্থ হন তিনি। দু-গ্র“পের হাতাহাতিতে পন্ড হয়ে যায় তার ঐক্যের প্লাটফর্ম।
এদিকে নাহিদের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থেকে বিভক্ত থাকায় এবারো কর্মী সভায় উপজেলা পর্যায়ের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের একই প্লাটফর্মে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। অনেকটা ঘটা করে কর্মী সভার আয়োজন করলেও উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে দ্বন্দ্বের অবসান হচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বিভেদ ভুলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একই প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা করছেন নাহিদ। চলতি মাসেই আরো দুইবার নাহিদের আহবানে সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু সকল আয়োজনে ব্যর্র্থ হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার সকাল ১১টায় উপজেলার স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে কর্মী সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে দু’টি গ্র“পের নেতাকর্মীদের মধ্যে শ্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে হট্টগোল দেখা দেয়। এরপর নেতাকর্মীদের বক্তব্য না শুনেই কর্মীসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। কর্মীসভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, গোলাপগঞ্জ আওয়ামীলীগে কোন বিভেদ নাই। অতীতে আমার অনেক ভুল ত্র“টি হয়েছে। মন্ত্রী হওয়ায় আমার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। ভুল-ত্র“টি হলে ক্ষমা করে দিবেন। আর আওয়ামীলীগকে দুর্বল কেউ মনে করবেন না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফুর রহমান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বদরুল ইসলাম সোয়েব, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক আকবর আলী ফখর, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রুহিন আহমদ খান, প্রমুখ।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ আহুত এই কর্মীসভা বয়কটকারীদের মধ্যে রয়েছেন গোলাপঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শরফ উদ্দিন, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল লেইছ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ইমাম উদ্দিন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান, সদস্য জগলুল আহমদ চৌধুরী, মাহতাব উদ্দিন, মঈন উদ্দিন, রোকন আহমদ, হেলাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ জিলু, বাঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শরফ উদ্দিন, ফুলবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক মখলিছুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হানিফ খান, এনায়েত হোসেন, লক্ষীপাশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী মছলু, আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মঈন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বদরুল হক, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বশর সদরুল্লাহ চৌধুরী, বুধবারীবাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিক উদ্দিন।
অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শরিফ উদ্দিন শরফ জানান, অভ্যন্তরীণ কোন্দল যা ছিল তা নিরসন করার উদ্যেগ গ্রহণ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা নিরসন করা হয়নি। তাই আমিসহ অনেকেই কর্মীসভায় অংশ নেইনি। তিনি বলেন, কর্মীসভায় গিয়ে কর্মীদের কথা বলার সুযোগ থাকে না, এখানে কর্মীরা গিয়ে কি করবে।
গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস সামাদ জিলু বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এখনো নৌকার প্রার্থী নির্বাচন করেননি। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে আমরা সভা-সমাবেশে যাব।
ফুলবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মখলিছুর রহমান জানান, দলীয় বিভেদ নিরসনের লক্ষ্যে আলাদা সভা করে সমাধানের কথা থাকলেও তা না করে দুএকজন বিতর্কিত নেতাকর্মী নিয়ে সভা করায় আমরা এ সভায় উপস্থিত হইনি।