কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারা দেশে ২৫৬টি মডেল স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ঢাকার উপকণ্ঠে ৩৫টি মডেল স্কুলের নির্মাণকাজ শেষ হলেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত ও বিদ্যমান স্কুলগুলোর ওপর বাড়তি চাপ কমানোর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় মাউশি।
সূত্র জানায়, জেলা শহরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যাওয়ার পর তাদের সন্তানদের ভর্তি করানোর সুযোগ পান না। কারণ, আসনসংখ্যা আগে থেকেই পূর্ণ থাকে। এতে ভর্তির জন্য তদবির আসে মাউশিতে। সবকিছু বিবেচনায় প্রতিটি জেলা সদরে চারটি করে মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এসব স্কুল নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র ছিল।
সূত্র জানায়, ঢাকার উপকণ্ঠে ৩৫টি স্কুল নির্মাণ করতে গিয়ে জমি চিহ্নিতকরণ কমিটি প্রতিটি জেলায় একই ধরনের স্কুল নির্মাণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশের আলোকেই প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় প্রতি জেলায় চারটি করে স্কুল নির্মাণের।
মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চারটি জেলায় নয়টি সরকারি স্কুল হচ্ছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারি না।’
তবে ঢাকার অদূরে ১০টি স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকার উপকণ্ঠে ৩৫টি স্কুল নির্মাণ শেষে জেলায় জেলায় স্কুল নির্মাণকাজে হাত দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তমন্ত্রণালয়ের জমি চিহ্নিতকরণ কমিটির সুপারিশ ছিল প্রতিটি জেলায় যাতে চারটি করে একই ধরনের স্কুল হয়। সেই সুপারিশের আলোকে প্রাথমিকভাবে প্রতিটি জেলায় চারটি করে মডেল স্কুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সূত্র জানায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের ভবন হবে ১০ তলা। বিদ্যালয় এলাকার ভেতরেই থাকবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের আবাসিক ভবন। এ ছাড়া স্কুলে শিক্ষার্থীদেও জন্য থাকবে পৃথক কমন রুম। থাকবে খেলার মাঠ ও লাইব্রেরি কক্ষ। প্রতিটি বিদ্যালয়েই নির্মাণ করা হবে একটি করে শহীদ মিনার। স্কুলের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট রাস্তা ও ফুলের বাগান।
এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে থাকবেন একজন প্রধান শিক্ষক, দুজন সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ১০৮ জন সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়গুলোতে থাকবে আইসিটি, জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের পৃথক ল্যাবরেটরি। এগুলোর জন্য থাকবেন পৃথক ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি বিদ্যালয়ে দুজন স্টুডেন্ট কাউন্সিলর এবং একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হবে। বিদ্যালয়গুলোতে মোট ১৬২ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন।
চার বিভাগীয় শহরে নয় সরকারি স্কুলের অনুমোদন :
চার বিভাগীয় শহরে নয়টি সরকারি স্কুলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ৩০ অক্টোবর একনেকে এই স্কুল নির্মাণের প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। মাউশি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই নয়টি স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের এখনো প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ হয়নি। তবে শিগগির এই প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। পিডি নিয়োগের পরই শুরু হবে কার্যক্রম। সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ আগামী জানুয়ারি মাসে শুরু হতে পারে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় শহরের মধ্যে রাজশাহীতে দুটি, রংপুর বিভাগে দুটি, চট্টগ্রাম বিভাগে দুটি, জয়পুরহাটে একটি, নবগঠিত ময়মনসিংহে একটি এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল চা-বাগান এলাকায় একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। আধুনিক ভৌত অবকাঠামোর সুবিধাদি এবং যুগোপযোগী শিক্ষাসামগ্রীর সমন্বয়ে এসব বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পের প্রতিটি স্কুলে আধুনিক ভবন, আইসিটি ল্যাব, সায়েন্স ল্যাব, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বই-পুস্তক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের যেসব স্থানে সরকারি স্কুল নেই, সেখানেই নতুন করে নয়টি বিদ্যালয় তৈরি করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একনেকের সভায় এটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্প পরিচালকসহ জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর প্রথম পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নয়টি সরকারি স্কুল স্থাপনে ঝামেলা অনেক কম। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু পিডি নিয়োগ হলেই স্কুলের ভবন নির্মাণকাজ শুরু করতে পারে। আশা করা যায়, আগামী জানুয়ারিতেই এর কার্যক্রম শুরু হবে।’