সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। একের পর এক ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। কারা, কি কারণে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যাচ্ছে দীর্ঘ তদন্তে কোন রহস্য উন্মোচন হচ্ছে না। এসব ঘটনায় উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৬টি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুইটির পরিচয় পাওয়া গেলেও বাকি ৪টি লাশের পরিচয় রয়েছে অন্ধকারে। ৬টি লাশের মধ্যে একটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় কানাইঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায়। অপর একটি পরিচয় পাওয়া যায় স্বজনদের মাধ্যমে।
(৬ আগষ্ট) গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশায় ক্ষেতের ডোবা থেকে ৩০ বছরের এক অজ্ঞাত যুবতীর গলিত লাশ উদ্ধার করছে পুলিশ। ওইদিন সকাল ৯টায় দক্ষিণ লক্ষ্মীপাশা গ্রামের এক মহিলা ওই ব্যক্তির গলিত লাশ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশিদের সহযোগীতায় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে ময়না তদন্তের পর সিলেট মানিকপীরের টিলায় দাফন করা হয়। তবে ওই লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সাংবাদিকদের জানায় ওটা পুরুষের লাশ ছিল। ওই ঘটনার কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
(৮ অক্টোবর) গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউপির রস্তমপুর এলাকার একটি ব্রীজের নিচ থেকে থেকে ৫০ বছরের এক পুরুষের রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে তার কোন পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে ময়না তদন্তের পর সিলেট মানিকপীরের টিলায় দাফন করা হয়। ওই লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর (২৮ অক্টোবর) কানাইঘাট থানা পুলিশের সহযোগীতায় ওই ঘটনার ক্লু ও ওই লাশের পরিচয় শনাক্ত করে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে ওই খুনের ঘটনায় নিহতের শ^াাশুড়ী ও ভায়রাসহ ৩জনকে আটকের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। খুন হওয়া ওই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে মুহিবুর রহমান (৫০) বলে জানা যায়।
(২৮ অক্টোবর) সকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউপির চৌঘরী এলাকা দিয়ে ভয়ে যাওয়া সুরমা নদীর (বুরবুরির ডর) থেকে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ওই লাশের কোন পরিচয় না পেয়ে ময়না তদন্তের পর সিলেট নগরীর মানিকপীরের টিলায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে। এই লাশের ক্লু পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
(৩০ অক্টোবর) গোলাপগঞ্জের বাঘা তুড়–ভাগ খেয়াঘাটের সুরমা নদী থেকে চুনু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত চুনু মিয়ার বাড়ী বাঘা ইউপির মাজেরমহল্লা গ্রামে। ওই লাশ উদ্ধারের পর নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানায় কেউ তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পরবর্তী আর কোন তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
(৩ নভেম্বর) গোলাপগঞ্জে নিখোঁজ হওয়ার ৪দিন পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে উপজেলার ভাদেশর ইউপির মাইজভাগ গ্রামের মৃত আছাব আলীর ছেলে আজমল আলী (৫৫) নামে এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির হাত-পা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সময় নিহতের প্রতিবেশিরা সাংবাদিকদের জানান,নিহতের ছেলেরা তাদের বাবাকে দীর্ঘদিন থেকে মানষিক ও শারিরিক নির্যাতন করে আসছিল। ওই ঘটনার পরবর্তী তথ্য পুলিশের কাছ থেকে আর জানা যায়নি।
সর্বশেষ (৮ নভেম্বর) গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ লেচুবাগান থেকে ২৭ বছর বয়সের অজ্ঞাত এক যুবতীর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন সকাল ৯টায় উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির রায়গড় লেচুবাগান নাহিদ মিয়ার বাড়ীর টিলার পাশে হাত-পা বাঁধা গলাকাটা ওই যুবতী মহিলার লাশটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে ওই লাশের ময়না তদন্তের পর সিলেট মানিকপীরের টিলায় দাফন করা হয়। পুলিশ বলছে ওই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আসামীদের হন্য হয়ে খুঁজছে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার সুরমা নদী দিয়ে একটি গলিত লাশ ভেসে যায়। স্থানীয়রা লাশের খবরটি পুলিশকে দিলে পুলিশ জানায় ভারত থেকে ওই লাশটি সুরমা নদী দিয়ে ভেসে আসছে। পুলিশ আর ওই লাশ উদ্ধার করেনি।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,৬টি লাশের মধ্যে আমরা ২টি লাশের পরিচয় পেয়েছি। বাকি উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর তদন্ত চলছে। বাঘা তুড়–ভাগ খেয়াঘাটের সুরমা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন চুনু মিয়া (৬০) নামের ওই বৃদ্ধ পা পিছলে নদীতে পড়ে মারা গেছেন। গলাকাটা যুবতী মহিলার লাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা কাজ করছি। ভাদেশ^রে পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন,ওই লাশের ব্যাপারেও আমরা অনেক এগিয়েছি। লক্ষ্মীপাশার ডোবা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের বিষয়ে তিনি বলেন,আমরা ওই লাশের ব্যাপারেও কিছু পাইনি। তিনি বলেন,দুটি লাশ ছাড়া বাকি লাশগুলো অন্যান্য এলাকা থেকে এ উপজেলায় এসেছে।