কাজিরবাজার ডেস্ক :
সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না করলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বলেছেন, ‘আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরি করতে হবে, সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচন, নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না।’
শুক্রবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগের দিন রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্ট বলেছিল, সমাবেশ থেকে এমন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে যা দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে দেবে। কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে সমাবেশ থেকে নতুন কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি।
সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যে বার বার সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়টিই উঠে এসেছে। শুক্রবার বেলা সোয়া ২টায় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা পৌনে ৫টায়।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি চতুর্থ জনসভা। এর আগে ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তার আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে ও ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সমাবেশে শারীরিক অসুস্থতার জন্য সভায় উপস্থিত হতে পারেননি প্রধান অতিথি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তবে তিনি মোবাইল ফোনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
ড. কামাল বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য বলেছিলাম যে, তফসিল যেন ঘোষণা করা না হয়, পিছিয়ে দেয়া হয়। সবাই যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সে দাবি না মেনে তরিঘড়ি করে দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলার অপচেষ্টা হচ্ছে। এটা মানুষকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এটা সংবিধান পরিপন্থী।’
জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন জনগণের রায়ের মধ্যে দিয়েই হবে। সাত দফার দাবি আদায়ে ও গণতন্ত্রের এই আন্দোলনকে সফল করবই করবো, এই শপথ নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের পতন হবে।’
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাইলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে। জনগণের রায় ও সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘সংলাপে গিয়েছিলাম, দেশ জাতিকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। বলছি, সংঘর্ষে যাবেন না। আমরা নির্বাচনে আসতে চাই। সংলাপে দাবি করেছিলাম, সংসদ বাতিল করেন, শুনলেন না। তরিঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। কিন্তু দেশের ৯০ ভাগ ভোটারকে বাদ দিয়ে, সাত দফা না মেনে দেশে নির্বাচন হতে পারে না।’
রব বলেন, ‘দাবি মানতে হবে। জান দেব, দাবি ছাড়ব না। মরতে হলে মরবো, দাবি আদায় করে ছাড়ব (ইনশাল্লাহ)। জনগণ আমাদের পক্ষে, আল্লাহ আমাদের পক্ষে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জনজোয়ারে আওয়ামী লীগের নৌকা ভেসে যাবে। আমরা সন্ত্রাস ও সংঘাত এড়ানোর জন্য সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দশ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্রের সংকট, বিচার বিভাগের সংকট ও আইনের শাসনের সংকট চলছে। মৌলিক অধিকার হারিয়েছে দেশের জনগণ। আমরা এগুলো ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এনিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম। কিন্তু সেই সংলাপ সফল হয়নি।’ তবে এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকের জনসভায় বিএনপির যে পরিমাণ নারী কর্মীর উপস্থিতি রয়েছে, তা যদি আমার দলে থাকতো তাহলে তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে ফেলতাম।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি লালন করছে অদূর ভবিষ্যতে তাদের বিচার করা হবে। বিএনপি রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেয়নি, প্রথম পতাকা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। আপনারা আন্দোলনে আছেন, আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজনকে আসতে বাধা দেয়া হয় উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘পুলিশ গাড়ি আটকে দিয়েছে । নাটোর, বগুড়া, রংপুরের গাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি। প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছেন, তা হবে না।’
এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, নাগরিক ঐক্যের প্রধান উপদেষ্টা এসএম আকরাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, এলডিপি মহাসচিব ড. রেজোয়ান আহমেদ, বিকল্পধারার মহাসচিব শাহ আহমদ বাদল, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।