জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের স্থগিতাদেশের ৩বছর পর ২০১৮ সালের ২৬ মে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় বিশ্বনাথ উপজেলা কোটায় আবেদনকারী ৭৬ জনের মধ্যে ৩৫ জনই বহিরাগত ছিলেন, এমন অভিযোগ স্থানীয় প্রার্থীদের। গত ৪ আগস্ট সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৫ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী রয়েছেন। আর ওই ২৫ জনের মধ্যে ১০ জনই বহিরাগত। তারা বিশ্বনাথ, রামপাশা ও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব সনদ ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিশ্বনাথের ভুয়া নাগরিক সেজেছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে চলতি (অক্টোবর) মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের কথাও রয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকদের।
তবে, নিয়োগপ্রাপ্ত অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেউ কেউ ভুয়া নাগরিক নন দাবি করলেও বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, রামপাশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এডভোকেট মুহাম্মদ আলমগীর ও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন সমকালকে বলেছেন, সরকারি চাকুরি পেতে এরা তাদের ইউনিয়নের সনদপত্র জালিয়াতি করেছেন।
এদিকে, ভুয়া সনদে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে একটি সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়েছে। আগামি ৩ অক্টোবর বিশ্বনাথের সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ‘বিশ্বনাথবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভাসহ নানা কর্মসূচীও আসছে বলে বিশ্বনাথের শিক্ষানুরাগী ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ আগষ্ট মৌখিক পরীক্ষা চলাকলে স্থানীয় প্রার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাথে সাথে ‘মুকিবুর রহমান (রোলনং ৫৩২০৫২৬) ও আহসান উল্লাহ (রোল নং ৫৩২০৫২৫) নামের দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তিতে ৩ জন তারপর আরও ৫জন মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ত্ব সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনেন অপু বৈদ্যসহ স্থানীয় প্রার্থীরা। আর ৮জনকে অভিযুক্ত করে গত ২০ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন প্রার্থীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোন্তাকিম ও বিশ্বনাথ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহি উদ্দিনকে দিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে সনদ জালিয়াতির জন্যে জাহিদুল হাসান (রোল নং ৫৩১৩০১৮), সঞ্জয় তালুকদার (রোল নং ৫৩২০১৭১) ও শায়ান চন্দ্র তালুকদারের (রোল নং ৫৩২০২৩৪) নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর বাকি ৫ জনের মধ্যে আঁখি বণিক (রোল নং ৫৩১৬৪৮৫), তমা মিস্ত্রি (রোল নং ৫৩২১২৩৭), হেপী সরকার (রোল নং ৫৩৩০৫২৮), বেবী সরকার (রোল নং ৫৩৩০৫১১) ও তাহমিনা ইয়াছমিনকে (রোল নং ৫৩২১৩৩৩) অভিযুক্ত করা হলেও এখনও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শুর করাই হয়নি।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মুন্তাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সঞ্জয় তালুকদার, শায়ান চন্দ্র তালুকদার ও জাহিদুল হাসান’ নামের ৩ জনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সে অভিযোগ এখনও তদন্ত করা হয়নি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের নিয়োগও বাতিল করা হবে।