কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনি উপকরণ। আজ সোমবার (৩০ জুলাই) শুরু হবে ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ।
ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তিন সিটি এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে নির্বাচনি এলাকাগুলোতে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলো চিহিৃত করে সেখানে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থাও রেখেছে প্রশাসন।এছাড়া প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে মাঠে রয়েছেন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ১৯ দিন এ তিন সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা অবিরাম ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে। প্রচার-প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে শনিবার (২৮ জুলাই)। প্রার্থীরা ভোটারদের দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি।এখন ভোটারদের পালা।
সিলেট : সিলেটের ১৩৪ ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নগরের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান জানান, ‘মহানগরী এলাকায় সাড়ে তিন হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।আড়াই হাজার আনসার ও ৩২০ জন র্যাব সদস্যও দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া মাঠে থাকছে ১৪ প্লাটুন বিজিবি।’ তিনি আরও জানান, ‘ভোটগ্রহণ উপলক্ষে থাকবে চারস্তরের নিরাপত্তা বলয়। ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা, কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা, দুইটি ওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও ছয়টি ওয়ার্ড নিয়ে আরও একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সিলেট মহানগরীকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সিলেট উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর (সেন্ট্রাল)।’ কোনও প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কিনা- তা দেখভাল করবেন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, সিলেট সিটি করেপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় এবার ৩০ হাজার ৬৮৬ জন ভোটার বেড়েছে। এ সিটিতে বর্তমানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন।
বরিশাল : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছে। এছাড়া তৎপর রয়েছে র্যাবও। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছেন র্যাব সদস্যরা। নগরীতে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য মোটরযানের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর তিনটি প্রবেশ মুখে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নগরীর ভেতরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সার্বক্ষণিক চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়া বহিরাগতদের নির্বাচনি এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। আবাসিক হোটেলগুলোতে চালানো হচ্ছে তল্লাশি অভিযান।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, ‘প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ জন সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০ জন। আর ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৪ জন সদস্য। অস্ত্রধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১২ জন। এছাড়া ১৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও তিনশ’ র্যাব সদস্য ভোটকেন্দ্র ও চারপাশের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে বিজিবির আরও ৪ প্লাটুন ও র্যাবের ২০ জন সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হবে। এছাড়া আরও থাকছেন ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।’
এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি, যার মধ্যে ১১২টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজশাহী : রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান জানান, রাজশাহীতে এবার মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি এবং বুথের সংখ্যা ১ হাজার ২০টি। নির্বাচন কমিশন ১১৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। রবিবার রাজশাহীর গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল মিলনায়তনে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি উপকরণ সরবরাহ করা হয়। এবার নগরীর বিবি হিন্দু একাডেমিতে দুইটি কেন্দ্রে (১০০,১০১) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার এ সিটির ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। মোট ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন নারী এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন দলীয় প্রতীকে এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন। এছাড়া সাধারণ ১৬০ জন কাউন্সিলর ও ৫২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন।
জানা গেছে, একটি কেন্দ্রে ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।নির্বাচন পর্যবেক্ষরেণ ৯টি সংস্থার ১৯৯ জন পর্যবেক্ষক থাকবেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দুতাবাস থেকে তিনজন থাকবেন, যাদের মধ্যে একজন বিদেশি।এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরীতে বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় মাঠে রয়েছে পুলিশ ও আনসার বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ প্লাটুন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। চার প্লাটুন রিজার্ভ রাখা হয়েছে। র্যাব-৫ -এর লেফটেনেন্টে কর্নেল মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সাড়ে চারশ’ র্যাব সদস্য মাঠে থাকবে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে র্যাবের একটি করে টিম অবস্থান করবে। সেই সঙ্গে বাকিরা টহল অবস্থায় থাকবে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘জননিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে তিন হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নির্বাচনি মাঠে রয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ১ হাজার ৯৫০ আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকছে। ’