সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরের মানুষের প্রতি আমার অগাধ আস্থা। তারা যে কাউকে যেমন বুকে টেনে নিতে পারেন তেমনি আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে দিতে পারেন। গত ৫ বছর আমার ওপর যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে এবং আমার কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার বিচারের ভার আমি নগরবাসীর ওপরই ছেড়ে দিলাম।
তিনি আরো বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনকে বানচাল করা যাবে না। সিলেটের মানুষ অন্যায় সহ্য করে না। আপামর জনতা যদি ষড়যন্ত্রের বিষয় টের পেয়ে যায় তবে ষড়যন্ত্রকারীরা পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। তিনি প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার আহবান জানান।
শনিবার (২৮ জুলাই) সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ দিনের গণসংযোগে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১১টায় তিনি নগরীর ঝেরঝেরিপাড়া এবং মিরাবাজার আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন।
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সদ্যবিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার কর্মী সমর্থক প্রচার চালাতে পারছে না। তারা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ এ অবস্থায় নগরবাসীকে সোচ্চার ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নগরের মানুষই আমার বড় ভরসা। পুণ্যভূমি সিলেটে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না এখানকার মানুষ এ বিশ^াস আমার আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নোংরামি পছন্দ করি না, অপপ্রচারে বিশ^াস করি না। যারা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব বলছে তাদেরকে ব্যালেটের মাধ্যমে নগরবাসী সমুচিত জবাব দেবেন বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ^াস করি।’
আরিফুল হক আরো বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। জনগণের রায় ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে সরকার ও প্রশাসন। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা সিলেটে অবস্থান করে পুরো পরিস্থিতিকে ভিন্ন মোড় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেরা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আমার নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের মানুষ আমাকে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু যখনই আমি নগরের উন্নয়নে হাত দেই তখনই একটি অশুভ শক্তি বাধা হয়ে দাড়ায়। সরকারের রোষানলে পড়ি আমি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে তিন বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়। প্রথমে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়। যখন আইনি মোকাবেলা করে জামিনে বেরিয়ে আসব তখনই ১০ বছর পর জড়িয়ে দেওয়া হলো সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টা মামলায়। এভাবে প্রায় তিন বছর আমাকে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্টে থাকতে হয়েছে। অবশেষে উচ্চ আদালতে নির্দেশে আমি জামিন পাই।’ আরিফ বলেন, ‘কেন আমার প্রতি এই অবিচার? আমার অপরাধ কি? সিলেটের মানুষ আমাকে ভালোবাসে এটাই কি আমার অপরাধ? যদি তাই হয় এর বিচারের ভার আমি নগরবাসীর কাছেই ছেড়ে দিতে চাই।’
আরিফুল হক চৌধুরী আরো বলেন, সিলেটে নির্বাচনের জন্য মনোনীত কয়েকজন প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আবারো বলছি, দয়া করে সিলেটের মাটিকে কলংকিত করার চেষ্টা করবেন না। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পুণ্যভূমি সিলেটে অন্যায় করে ধ্বংস হয়ে গেছে এমন উদাহরণ ভুরিভুরি আছে। এ পুণ্যভূমি অন্যায়, অবিচার কখনো সহ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তারপরও কেউ যদি কোনো অপচেষ্টা চালালে তার পরিণতি কোনভাবেই শুভ হবে না। এই নগরীর মানুষের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করবে না। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন, আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।’ আরিফুল হক চৌধুরী সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় সচেতন থাকার জন্য সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানান।
দুপুরে আরিফুল হক চৌধুরী দরগাহ মাদরাসায় আলেম উলামা এবং মাদরাসার ছাত্রদের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক এমপি মাওলানা এডভোকেট শাহিনূর পাশা চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আলেম উলামাদের সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক। আলেম উলামাদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। তারা ও আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাঁদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ আমাকে একবার কাউন্সিলর এবং একবার মেয়র হিসেবে বিজয়ী করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
মতবিনিময় সভায় আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন মাদরাসার মুহাদ্দিস মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী।
নগরীর ঝেরঝেরিপাড়া ও মিরাবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, মহানগর খেলাফত মজলিস-এর সহ সভাপতি আব্দুল হান্নান তাপাদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহমান, আম্বরখানা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কুতুবুর রহমান চৌধুরী, করিমুল্লাহ মার্কেটের সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক কাওছার আহমদ।
এছাড়া গণসংযোগকালে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট এবং অঙ্গ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি