কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ২২ রমজানুল মোবারক। ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মৌসুম এটি। সমাজ থেকে কিছু পেতে হলে সমাজকে কিছু দিতে হয়। কিন্তু মানুষ এ বিষয়টি খেয়াল করে না। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না; বরং ত্যাগের চেয়ে ভোগের নিরন্তর স্পৃহাই মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করে বেশি। অবশ্য, ব্যতিক্রম চরিত্র মাধুর্যের মানুষ যে নেই তা নয়। আছে, তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ভোগবাদী মানুষের পাশাপাশি যুগে যুগে ত্যাগী ও আত্মোৎসর্গীত মানুষের উপস্থিতিও আছে বলে সমাজ অন্তত আজও এতটুকুন আবাসযোগ্য রয়েছে।
যারা ভোগবাদী তারা মনে করে, ভোগের মাধ্যমে তারা দুনিয়াটাই কব্জা করে নেবে, কিন্তু আসলে তা একটি মিথ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা। যুগে যুগে তারা ঘৃণীত, বিস্মৃত ও ধিকৃত হয় এবং ক্রমেই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে যারা ত্যাগী, তারা মনুষ্য সমাজে চিরস্থায়ী সম্মানজনক আসন লাভ করে থাকে। তারা পরম অনুপ্রেরণা হন সত্যাশ্রয়ী মানুষের জন্য। দাতা হাতেমতাঈ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন মাবেতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
আমাদের প্রিয় নবী হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ত্যাগের, দানের, সমাজসেবা ও সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ বিবেচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। নিজের জন্য কিছু গ্রহণ, ভোগবাদিতা প্রকাশের কোন ফুরসত জীবনে কখনও তিনি পাননি। সমাজের জন্য, একটি সুশীল সুসভ্য জাতি সৃষ্টির জন্য তিনি জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ ও কুরবানি দিয়েছিলেন। এমনকি পানাহার, ঘুম, আরাম-আয়েশ কিছুই তিনি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেননি।
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবীব হয়েও তিনি নিজে ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বেঁধে রেখেছিলেন। হজরত ফাতেমার শ্বশুরালয়ে একবার তিনি অহেতুক সাজসজ্জা দেখে নীরবে গৃহত্যাগ করেছিলেন। আর দান করার ক্ষেত্রে এমন হয়েছিলেন যে, জনৈক দীনহীন লোকের আবদার রাখতে গিয়ে নিজের পরণের একমাত্র জামাটি খুলে দিয়েছিলেন। অবশ্য এ জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে কুরআনের আয়াত নাযিলের মাধ্যমে দানের কতিপয় নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে- তুমি এমনভাবে হাত গুটিয়ে বসে থেকো না, যাতে লোকজন তোমাকে কৃপণ বলে তিরস্কার করবে, আবার এমনভাবে দানও করবে না যাতে তুমি রিক্তহস্ত হয়ে পড়।’
হাদিস শরিফে আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ কতিপয় মানুষকে অভিযোগ করবেন- ‘আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমাকে খাদ্য দাওনি, আমি তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত করনি; আমি কাপড়ের মুহতাজ ছিলাম তুমি আমাকে কাপড় দাওনি।’ বান্দা তখন বলবে- ‘ওহে মহামহিম প্রভু! আপনি তো অমুখাপেক্ষী, বে-নিয়াজ। আপনি তো এসব হাজত হতে মুক্ত পবিত্র। কখন কীভাবে আপনি তা আমাদের কাছে চেয়েছিলেন?’
আল্লাহ উত্তরে বলবেন- ‘আমি যাইনি ঠিকই, আমার গরীব-অভাবী বান্দাগণ ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় ও বস্ত্র সমস্যা নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিল। তুমি তাদের প্রয়োজনীয় সেবাদান করলে তাদের মধ্যে আমার সন্তুষ্টিই খুঁজে পেতে।’ এ জন্য কুরআনে বলা হয়েছে- ‘ওয়া ফি আমওয়ালিহিম হাক্কুন লিস সায়িলি ওয়াল মাহরুম’ অর্থাৎ তাদের ধন-সম্পদে ভিখারি ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। কুরআনুল কারিমে আরও বলা হয়েছে: ‘যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে আর তা থেকে আল্লাহর রাহে খরচ করে না, তাদেরকে পরকালে ভয়ানক আযাবের সুসংবাদ দান কর।’ অর্থাৎ তাদের আযাব বা শাস্তির পরিণাম ও মজা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে বল।
হযরত মুহাম্মদ (স.) হাদিস শরিফে বর্ণনা করেছেন- যখন তোমাদের নেতৃত্ব উত্তম যোগ্যতার অধিকারী হয় আর তোমাদের ধনিক শ্রেণী দানশীল হয় এবং তোমাদের সমস্ত সিদ্ধান্ত পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে হয়, তবে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ এর অভ্যন্তর ভাগ হতে উত্তম হয়। অর্থাৎ এ দুনিয়া আল্লাহর রহমতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে।
সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা ধনী, তাদের উচিত, সময় মতো যাকাতের টাকা-পয়সা গরিবদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করা। এটি একজনের হাতে পুঁঞ্জিভূত থাকলে সমাজের অর্থনীতির চাকা থেমে যায়। নিজেকেও নানা পাপ, সঙ্কীর্ণতা ও গজব এসে গ্রাস করে।