তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
বৃষ্টির দিনে পাহাড়ি ছড়ায় কয়লা কুড়ানোতে ব্যস্ত হাজারো মানুষ। সীমান্তে কমপক্ষে দশ পাহাড়ি ছড়ায় প্রবল বৃষ্টিপাতের দিনে দেখা যায় এ চিত্র। হাজারো নারী-পুরুষ মেঘ-বৃষ্টি, বজ্রপাত উপেক্ষা করে কয়লা কুড়াচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে নদীতে মাছ ধরার উৎসব চলছে কিন্তু না প্রত্যেকে জাল দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা কয়লা কুড়াচ্ছে। আর কুড়ানো কয়লা প্রতি বস্তা স্থানীয় ভাবে বিক্রি হচ্ছে ২শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা। স্থানীয়দের কাছে কুড়ানো কয়লা বাংলা কয়লা হিসেবে পরিচিত।
তাহিরপুর উপজেলার শুল্ক বন্দর রয়েছে ৩ টি। তা হল বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বীরেন্দ্র নগর বাগলি। এ ৩টি শুল্ক বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী করা হয়। ভারতীয় কয়লা রপ্তানীকারকরা বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানীর লক্ষ্যে সীমান্তে ভারতীয় অংশে মেঘালয় পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে কয়লা জমা করে রাখেন। পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় জমাকৃত কয়লা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিভিন্ন নালা ধরে বাংলাদেশে ভেসে চলে আসে।
তাহিরপুর উপজেলায় ২০ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। ২০ কিলোমিটার সীমান্তে বড়ছড়া, চারাগাঁও, রজনী লাইন, লাকমা, বাগলি, কলাগাঁও, বীরেন্দ্র নগর, জঙ্গলবাড়ি, ট্যাকেরঘাট, চানপুর ও যাদুকাটা নদী সহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ছোট-বড় পাহাড়ি নদী-নালা ও ছড়া রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় এ সমস্ত নদী নালা ধরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রচুর পরিমাণ, গাছপালা, বালি ও কয়লা চলে আসে বাংলাদেশে সীমান্তে। আর ভেসে আসা কয়লা কিংবা গাছপালা বিভিন্ন নালা, ছড়া কিংবা নদী থেকে কুড়িয়ে নেন বাংলাদেশের হাজার হাজার লোকজন। তবে এ চিত্র বেশী চোখে পড়ে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও কলাগাঁও ছড়াতে।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দিনে পাহাড়ি কয়লা কুড়ানোর চিত্র দেখা যায় হর হামেশায়। যে দিনই প্রবল বৃষ্টিপাত হবে সে দিনই ঢলের পানিতে কয়লা কুড়ানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে হাজার-হাজার লোকজন। এদের মধ্যে নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু কিশোরদের উপস্থিতি চোখের পরার মত।
স্থানীয় লোকজনের কাছে প্রবল বৃষ্টিপাতের দিন অনেকটা আনন্দের। শ্রমিকরা কুড়ানো কয়লা স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি ২শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা।
কলাগাঁও গ্রমের কয়লা কুড়ানো শ্রমিক মঞ্জুর আলী তিনি বলেন, বৃষ্টির দিনে ছড়া থেকে পনেরও বিশ বস্তা কয়লা কুড়ানো যায়। এ থেকে হাজার পাচেক টাকা পাই।
একই অবস্থার কথা জানিয়ে গ্রামের নারী শ্রমিক হাজেরা বানু বলেন,বৃষ্ঠির দিনে এটা তাদের বাড়তি আয়।
পাতারগাঁওর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সহীদ জানান, সম্প্রতি তিনি সীমান্তে গ্রাম কলাগাঁও তার আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন সে সময় কলাগাঁও ছড়াতে কয়লা কুড়ানোর চিত্র দেখে তিনি হতবাক।
আমদানী কারক ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী খসরুল আলম বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত হলে ভারত থেকে প্রচুর পরিমান কয়লা ঢলের পানির সঙ্গে ভেসে আসে। ভেসে আসা কয়লা স্থানীয়রা পানি থেকে কুড়িয়ে নেয় এবং কুড়ানো কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাল দামে বিক্রি করতে পারে।