স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল উপশহর ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা এন্ড কোংকে পচা মাছ বিক্রির দায়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমান এবং নগরীর ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত পৃথক মনিটরিং টিম। গতকাল রবিবার দুপুরে ফিজার উপশহর শাখায় অভিযান চালিয়ে এমন গুরতর অনিয়মের প্রমাণ পায় তারা। এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ফিজাকে এ জরিমানা করা হয়। এছাড়া শিবগঞ্জের এক ফল ব্যবসায়ীকেও ১ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্যাম্যমান আদালত। এদিকে, রবিবার বিকেলে নগরীর মুড়ি ফ্যাক্টরিসহ ৩ প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
উপশহর ও শিবগঞ্জ এলাকায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালিক রুমাইয়ার নেতৃত্বে উক্ত অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিএসটিআই ও পুলিশ সদস্যরা অংশ নেন।
সহকারী কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান, ফিজার উপশহর শাখায় পচা মাছ বিক্রি, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি ও আমদানিকৃত পণ্যে আমদানিকারকের লগো না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন ধারায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া শিবগঞ্জ বাজারে মূল্য তালিকা না থাকায় বেশকিছু মাছ ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয় এবং পণ্যে লেভেল না থাকায় ফল ব্যবসায়ীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পণ্য মূল্য ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং কমিটির এ অভিযান পুরো রমজান মাসজুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নগরীর আরও ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত অপর মনিটরিং টিম। দেড় ঘন্টা পর্যন্ত চলা এ অভিযানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম থাকায় তাদেরকে এ সতর্ক করে দেওয়া হয়। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন- সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ কুমার সিংহ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আশরাফুল আলম। এছাড়া এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ, ড্রাগ সুপার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর স্নিগ্ধেন্দু সরকার, ক্রিসেন্ট মেডিকেল সার্ভিসের চেয়ারম্যান জাকির আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
জানা গেছে, রবিবার রিকাবীবাজার এলাকার দি মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেন্সি সেন্টার, লামাবাজার মদন মোহন কলেজ সংলগ্ন সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মিরের ময়দান এলাকার শাহজালাল মেডিকেল সার্ভিসেস-এ অভিযান চালানো হয়। এগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক্স-রে কক্ষ থেকে বাতাস নির্গমন, প্যাথলজি ল্যাবে ডাক্তার না থাকায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এছাড়া লাইসেন্সসহ যাবতীয় কাগজপত্র নবায়নেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। দি মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেন্সি সেন্টারে প্যাথলজি ল্যাবে ডাক্তার না থাকা, সাইনবোর্ডে থাকা ডাক্তারের ডিগ্রী সঠিক না থাকার কারণে সতর্ক করা হয়। এখানেও লাইসেন্সসহ যাবতীয় কাগজপত্র নবায়নেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। আর শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সবকিছু ঠিক থাকলেও মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল না। এখানে সঠিক মূল্যতালিকা টানানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এই ত্রুটিগুলো দ্রুত সংস্কার না করলে প্রতিষ্ঠানগুলো সিলগালা করা হবে অথবা লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ কুমার সিংহ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আশরাফুল আলম।
এরআগে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের আরো ৪টি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত এ মনিটরিং টিম।
অপরদিকে, গতকাল রবিবার বিকেলে মুড়ি ফ্যাক্টরিসহ তিন প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বেতেরবাজার এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুড়ি উৎপাদনের দায়ে ‘এসএম মুড়ি ফ্যাক্টরি’কে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নগরীর রেলগেইট এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ‘সুলতানা রেস্টুরেন্ট’কে ৫ হাজার ও একই অপরাধে ‘তাজুল রেস্টুরেন্ট’কে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সিলেট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সহযোগিতায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।