চীফ মেট্রোপলিটন এজলাসে মহিলা কর্তৃক ৩ পুলিশ লাঞ্ছিত, অত:পর আটক ও কারাগারে প্রেরণ

52

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসের ভেতরে এক নারীর হাতে ৩ পুলিশ সদস্য লাঞ্ছিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে আদালতের বিচারক মো: সাইফুজ্জামান হিরোর নির্দেশে লাঞ্চনাকারী শংক রানী সরকার (৩৫) নামের নারীকে পুলিশ আটক করে। লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন- নারী কনস্টেবল শিউলি বেগম, লিজা বেগম ও এটিএসআই রাহাত আহমদ। এদের মধ্যে আহতবস্থায় কনস্টেবল লিজা বেগম সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে পুলিশকে লাঞ্চিত করার দায়ে নারী কনস্টেবল শিউলি বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৬ (৩-০৪-১৮)। পরে আদালত শংকু রাণী সরকারকে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। আটককৃত শংকু রাণী নেত্রকোনার কলমাকন্দা থানার কেশবপুর গ্রামের অপূর্ব কান্তি তালুকদারের স্ত্রী। বর্তমানে শহরতলীর খাদিমনগরের বহর মণিপুরী পাড়ায় এবং নগরীর ইলেক্ট্রিক সাপ্লাইর খায়ের মিয়ার গলির ৬ নং বাসার বাসিন্দা।
আদালত সূত্র জানায়, আটককৃত নারী শংকু রাণী সরকারের দায়েরকৃত একটি প্রতারণার মামলা (সিআর ১৫৭৪/১৭) সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারাধীন। এই মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। আদালতে ওই সময়ে অন্যান্য মামলার কার্যক্রম চলাকালিন সময়ে হঠাৎ তিনি জোরপূর্বক দায়িত্বরত পুলিশের বাধা না মেনে আদালতের এজলাসের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর এজলাসের ভেতরে উপস্থিত থাকা আইনজীবীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় তাকে দায়িত্বরত মহিলা কনেষ্টবল শিউলী বেগম ও লিজা বেগমসহ পুলিশের এক এটিএসআই রাহাত আহমদ তাকে সরিয়ে নিতে গেলে ওই নারী উত্তেজিত হয়ে তাদেরকে লাঞ্চিত করেন।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবীসহ মামলার এজাহার ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে শংকু রাণী সরকার অন্যান্য মামলার কার্যক্রম চলাকালিন সময়ে হঠাৎ তিনি জোরপূর্বক দায়িত্বরত পুলিশের বাধা না মেনে আদালতের এজলাসের ভেতরে প্রবেশ করেন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আদালতের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাকে আদালত কক্ষ থেকে বাহিরে অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শংকু রাণী নিজেকে একজন কর আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী দাবি করে হইহুল্লা শুরু করলে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীসহ অন্যান্যরা শংকু রানীকে নির্বিত্ব করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে অন্যান্য আইনজীবীদের সাথেও বাক বিতণ্ডায় জড়ান ওই নারী। পরবর্তীতে শংকু রাণী আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার সময় পুলিশসহ অন্যান্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারমুখী আচরণ করে পুলিশ সদস্যদের কিলঘুসি মারতে থাকেন। এসময় দায়িত্বরত মহিলা কনেষ্টবল শিউলী বেগম ও লিজা বেগমসহ পুলিশের এটিএসআই রাহাত আহমদ আহত হন। ঘটনার আকস্মিকতায় আদালতের বিচারক মো: সাইফুজ্জামান হিরো আদালতের কার্যক্রম কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আইয়ুব আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালতের এজলাসের ভেতরে অন্যান্য মামলার শুনানী চলাকালে শংক রাণী সরকার নামের ওই মহিলা জোরপূর্বক প্রবেশ করে আইজীবীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এসময় তাকে দায়িত্বরত পুলিশ বাধা দিলে তিনি দুই নারী কনস্টেবল ও পুলিশের এক এটিএসআইকে লাঞ্ছিত করেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে পুলিশ আটক করে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল শিউলি বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করলে আদালত তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার রেকর্ড অফিসার (জিআরও) এসআই নিহার বিজয়ন্দ্র দাস বলেন, আদালতের ৩ পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছনার অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল শিউলি বেগম বাদী হয়ে শংক রাণী সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে শংকু রাণীকে। গতকাল রাত ৮ টার দিকে আটককৃত শংক রাণীকে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে তাকে মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।