কানাইঘাটে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গুলিতে নিহত ১, আহত ৩

86

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট সদর ইউ.পির ছোটদেশ আগফৌদ গ্রামে এক প্রবাসী পরিবারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির সময় অস্ত্রধারী ডাকাত দলের গুলিতে ইফজাল উদ্দিন (৪৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। ডাকাতদের হামলায় পরিবারের আরো ৩ সদস্য আহত হন। থানা পুলিশ ও সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ জানা যায় গত বুধবার রাত অনুমান ২টার দিকে ১২/১৫ জনের একটি অস্ত্রধারী ডাকাতদল ছোটদেশ গ্রামের আব্দুল জলিলের নির্জন একতলা পাকা বসত বাড়ীতে হানা দেয়। প্রথমে ডাকাতরা ঘরের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে পরে বসত ঘরের কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের নারী-পুরুষসহ সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের মালামাল তছনছ শুরু করে। এ সময় সৌদি প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বেগমের শোর চিৎকার শুরু করলে তার শ্বশুর গৃহকর্তা আব্দুল জলিল বসত ঘরের একটি কক্ষ থেকে বের হলে ডাকাতরা তাকে মারধর করে বেঁধে ফেলে। তার আর্তচিৎকারে বাড়ীর অন্য একটি ঘরে বসবাসরত আব্দুল জলিলের পুত্র ইফজাল উদ্দিন ঘর থেকে বের হয়ে ডাকাতদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন ডাকাতকে তিনি আঘাত করতে চাইলে ডাকাতরা তার পেটে গুলি ছুঁড়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের স্বর্ণালংকার ও নগদ কিছু টাকা ও দামী জিনিসপত্র লুট করে প্রায় আধাঘন্টা বাড়ীতে তান্ডব চালিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায়। ডাকাতরা চলে যাবার পর বাড়ীর লোকজনের শোর চিৎকারে আশপাশ বাড়ীর লোকজন ঘুম জেগে উঠে গুলিবিদ্ধ ইফজালুর রহমানকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে পথিমধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বাদ এশা ছোটদেশ দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা মাঠে জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযায় এলাকার শত শত মানুষ শরীক হন। এদিকে ডাকাতদের গুলিতে একজন নিহতের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক বুধবার গভীর রাতে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে যান সিলেট উত্তর সার্কেলের এডিশনাল পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, কানাইঘাট সার্কলের এএসপি আমিনুল ইসলাম সরকার, ওসি আব্দুল আহাদ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিলেট (সিআইডির) ক্রাইমসিম এর কর্মকর্তারা ও কানাইঘাট সদর ইউপির চেয়ারম্যান মামুন রশিদ, বানীগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়ীর মালিক আব্দুল জলিল ও ঘরের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন এবং ডাকাতির আলামত ঘুরে দেখেন। এডিশনাল পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করে বলেন, যে ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে অত্যন্ত তা জঘণ্যতম ঘটনা। ডাকাতি করে মালামাল লুট ও হত্যার ঘটনার মতো বড় অপরাধ যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন খুনিরা রেহাই পাবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় বাড়ীর গৃহকর্তা আব্দুল জলিল বাদী হয়ে ১০/১২ জন্য অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা ও ডাকাতির মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ডাকাতির সাথে জড়িত সন্দেহে এক যুবক কে আটক করেছে তার নাম গোপন রাখা হয়েছে। জানা গেছে নিহত ইফজাল উদ্দিনের ২ ভাই স্পেন ও ৩ ভাই সৌদি আরবে থাকেন। বাড়ীতে তিনি সহ তার স্ত্রী ৪ ছেলে-মেয়ে বাবা-মা ও প্রবাসী ৩ ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানরা বসবাস করেন। থানার ওসি আব্দুল আহাদ ডাকাতির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ডাকাতদের গুলিতে নিহত ইফজালুর রহমান মারা গেছেন। ডাকাতরা কি পরিমাণ মালামাল নিয়ে গেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে। এদিকে ডাকাতির ঘটনাস্থল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এলাকার শত শত নারী পুরুষ আব্দুল জলিলের বাড়ীতে ভিড় করছেন। নিহতের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম ও পরিবারের লোকজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এলাকার সবাই এ ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ডাকাতি ও হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। গৃহকর্তা আব্দুল জলিল জানান ১২/১৫ জনের ডাকাতদল তার বাড়ীতে হানা দিয়ে তাকেসহ পরিবারের সবাইকে বেঁধে রেখে তার কাছে আলমিরা, সোকেসের চাবি চায় তিনি ডাকাতদের চাবী দিলে তারা সব কিছু তছনছ করে। তার আর্তচিৎকারে অন্য ঘর থেকে ছেলে ইফজাল উদ্দিন ডাকাতদের প্রতিরোধ করতে চাইলে ডাকাতরা তার সন্তানকে গুলি করে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের স্বর্ণালংকার ও দামী জিনিসপত্র নিয়া পালিয়ে যায়। ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজন ছিল মুখোশ পরিহিত অনেকের গায়ে হাফ প্যান্ট ছিল। তাদের হাতে ছিল পিস্তল সহ ধারালো দা, লোহার রড।