তাহলে কি দেশে রাজাকারের বাচ্চা বেশি -রিজভী

67

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা সংস্কারের আন্দোলনকালীদের ঢালাওভাবে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আন্দোলনের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তাহলে কি দেশে রাজাকারের বাচ্চার সংখ্যা বেশি?’।
বুধবার সকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী। এ সময় তিনি সংসদে মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন।
গত সোমবার কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা সংকুচিত করার দাবির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী, যারা লড়াই করে, জীবন দেয়, জীবনকে বাজি রাখে তাদের জন্য সুযোগ রাখে। এটা নতুন কিছু না। যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলে মেয়ে কিংবা বংশধরদের আরেকটি সিঁড়ি সুযোগ পাবে না? ওই রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কোটা সংকুচিত করতে হবে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার কথা উল্লেখ করে মতিয়া আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে এবং এই রাজাকারের বাচ্চাদের অবশ্যই আমরা দেখে নেব।’
কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীরা ভেবেছেন তাদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন মতিয়া চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীকেই ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তার কুশপুতুল বানিয়ে মিছিল করেছেন তারা।
আর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে যারা হামলা করেছে, তাদেরকেই এই কথা বলেছেন।
রিজভী বলেন, এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলে তারা যখন যা খুশি বলে।
মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্যের কারণে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষেরও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘সরকারের তল্পিবাহক ছাড়া কোনো আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেননি। সরকারের কাছে নিজেদের বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।’
কোটা সংস্কার দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রিজভী সরকারকে ‘শিক্ষা বিনাশী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এরা (সরকার) মেধাবী লোক পছন্দ করে না। এই কারণেই এদের সময় সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, খাতায় কিছু না লিখেও ‘এ’ প্লাস পাওয়া যায়।’
‘এরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের শিক্ষাঙ্গন দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এজন্য ছাত্রলীগ ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ইত্যাদিতে রমরমা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আর এগুলো জারি রেখেই শেখ হাসিনা জনগণকে চোখ রাঙানি দিয়ে অপশাসনের পৌষ মাস চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রধানমন্ত্রীর চোখে চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রিজভীর।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘দুদিন ধরে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলে হলে ঢুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয়েছে।’
‘মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এতে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’
‘দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মনে হয়, ছাত্রলীগের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ, প্রতিবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘গত কয়েক দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘন ঘন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদচারণা করছেন। তাতে আমরা কোনো প্রতিকার দেখছি না। বরং সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণেরই ধারাবাহিক সহিংস ঘটনা দেশবাসী লক্ষ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।