প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পদক্ষেপ

32

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা এখন জাতির গলায় ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায়ও কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা পেয়েছে। সম্প্রতি আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ছয়টি কারণ তুলে ধরেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এসব সুপারিশ কার্যকর হলে আগামীতে বদলে যেতে পারে পাবলিক পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতি। ছাপানো প্রশ্নপত্রের বদলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে র‌্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে পরীক্ষার দিন সকালে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। মুদ্রিত প্রশ্নপত্রের পরিবর্তে সে ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিটি পরীক্ষা কক্ষের বোর্ডে প্রশ্ন লিখে দেওয়া হবে। আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে এই সভায়।
আমাদের দেশে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নতুন নয়। পরীক্ষা পদ্ধতিতে যখন রচনামূলক প্রশ্নপত্র তৈরি করা হতো তখনো অনেক সময় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মতো তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েনি। তখন ডিজিটাল মিডিয়া ছিল না। এত দ্রুত সর্বত্র সংবাদ পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এখন অনেক কিছুই হাতের মুঠোয় এসেছে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে, দুর্বলতাগুলো কখনো চিহ্নিত করা হয়নি। সব সময় বলির পাঁঠা করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তাদের নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা একের পর এক ঘটে যাওয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা রোধ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন ফাঁসের উৎস যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে তো কোনো দিনই কোনো প্রশ্ন ফাঁস হবে না। উল্টো বিকল্প ব্যবস্থায় যাওয়া মানে তো প্রশ্ন ফাঁসকারী দুর্বৃত্তদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া। নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে দেওয়া। আবার বেশির ভাগ সময় বিকল্প ব্যবস্থায় ঝামেলায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। যেমন আগামী বছর যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের এরই মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেছে। এখন যদি এমসিকিউ তুলে দেওয়া হয়, তাহলে তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, সে কারণে সেটা তুলে দিতে হবে কেন? এমসিকিউ প্রশ্ন চালু করার সময় কি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তব্যক্তিদের মনে আসেনি? শিক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থীদের নিয়ে তাঁরা আর কত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান।
প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই আমূল বদলে দিতে হবে। সেটা কী করে সম্ভব তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিন। শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবেন না।