পৌর বিপণী মার্কেট ও সন্ধ্যাবাজারে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান ॥ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানা

74

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন নগরীর পৌর বিপণী মার্কেট ও সন্ধ্যাবাজার দখল করে জুয়া, তীর ও অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় উচ্ছেদ করে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে দিনভর ওই মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে খালের উপর নির্মিত ভবনের দ্বিতীয় তলার অবৈধ কর্মকাণ্ডের আস্তানা।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকালে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ওই ভবন পরিদর্শনে গিয়ে এই নিষিদ্ধ পল্লীর সন্ধান পান। পরে র‌্যাব ও পুলিশ ডেকে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যাচেলর হোটেল নামের পাপরাজ্জি থেকে ৬ পতিতা ও হোটেলের ২ কর্মচারীকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় ভারতীয় তীর খেলার খেলার টুকেন সরঞ্জাম, নগদ টাকা, দেশীয় অস্ত্র। আটককৃতদের মধ্যে আবদুস শহীদ নামের এক কর্মচারী অভিযানকালে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানিয়েছে ওই নিষিদ্ধ পল্লীর মালিক নগরীর মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো। আলো জাগো সিলেট নামের একটি সংগঠনের কর্ণধার বলেও জানান তিনি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন পৌরবিপণী ও সন্ধ্যাবাজারে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে ব্যাচেলর হোটেল নাম দিয়ে ভোগদখল করে আসছিলেন আলা উদ্দিন আলোসহ কয়েক ব্যক্তি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে পৌরবিপণী মার্কেট পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তখন ওই মার্কেটের নিচতলার ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবৈধভাবে নির্মিত হোটেল ব্যাচেলরে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছেন আলা উদ্দিন আলো। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়ে দ্বিতীয় তলা পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় মার্কেটের পশ্চিম দক্ষিণ পাশে নির্মিত একটি ব্যাচেলর হোটেলে গিয়ে তিনি অসামাজিক কার্যকলাপের প্রমাণ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। এ সময় মেয়র সহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই হোটেলে থাকা ৬ নারী সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নিচের একটি রুমে আত্মগোপন করেন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা ওই রুম থেকে তাদেরকে বের করে আনেন। এছাড়া হোটেলের দুই কর্মচারীকেও আটকে রাখেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ২ কর্মচারী ও ৬ পতিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটককৃতরা হচ্ছে- সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বাইদুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল মুক্তাদিরের পুত্র আবদুস শহীদ ও জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর কামারপাড়ার মৃত আব্বাসের পুত্র মোস্তাক আহমদ, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের শওকত আলীর কন্যা জ্যোতি (২৮), সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর থানার পলাশ গ্রামের ঝর্ণা (১৯), গাজীপুরের শ্রীপুর থানার তাজুল ইসলামের কন্যা আঁখি (২২), গাজীপুর সদর থানার সজিব আহমদের কন্যা সুমি (২৮), ভোলা থানার পাটিয়া গ্রামের প্রিয়া (১৯) এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবীনগর থানার নতুনপূর্ণ গ্রামের কদ্দুস মিয়ার কন্যা কাজল (২৪)। এ সময় হোটেল থেকে জুয়া ও মাদক সামগ্রীও উদ্ধার করা হয়।
অভিযানকালে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হোটেলের কর্মচারী আবদুস শহীদ জানায়, মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো ওই হোটেলের মালিক। হোটেলটির তত্ত্বাবধান করেন মালেক নামের এক ব্যক্তি। অভিযান টের পেয়ে মালেক হোটেল থেকে পালিয়ে গেছে। প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরিতে তিনি ওই হোটেলে কাজ করেন বলে জানান শহীদ।
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফয়সল মাহমুদ জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেলের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে এরকম অসামাজিক কার্যকলাপের পেছনের মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, পৌরবিপণী মার্কেট এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলায় নির্মিত ঘরগুলোও অবৈধ। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ঘরের ভেতর অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে বলে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন। তাই অবৈধ এই স্থাপনা সিটি করপোরেশন গুড়িয়ে দেবে। অভিযানে সিসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু, আজাদুর রহমান আজাদ, মখলিছুর রহমান কামরান, রেজওয়ান আহমদ, দিনার খান হাসু, সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, সিকন্দর আলী, রকিবুল ইসলাম ঝলক, ইলিয়াছুর রহমান, আব্দুল মুহিত জাবেদ, সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, আলী আকবর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।