কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে নেপালের সব এয়ারলাইনস। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত সোমবারের দুর্ঘটনাসহ আট বছরে নয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে দেশটির বিমান ব্যবস্থাপনা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও অনেক আগে থেকেই নেপালের সব এয়ারলাইনস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে নিষিদ্ধ। গত মঙ্গলবার এ খবর ছেপেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) ও নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস করে না বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি।
এদিকে পৃথিবীর সব জায়গায় যখন আকাশ ভ্রমণ আরো নিরাপদ হচ্ছে, নেপাল তখন বারবার বিমান দুর্ঘটনার জন্য সংবাদ শিরোনামে আসছে। এ অবস্থায় ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন জানিয়েছে, ‘দেশটি খুব সুন্দর, কিন্তু অসমতল ভূমির কারণে সেখানে বিমান পরিচালনা পৃথিবীর অন্য জায়গার চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’ এই ঝুঁকি আরো বেড়ে যায় দেশটির অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনসগুলো পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ উড়োজাহাজ ব্যবহার করায়। সেগুলো যারা পরিচালনা করে, তারাও যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এবং তারা বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে না। একারণে, সেখানে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা নিকট ভবিষ্যতে বন্ধ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এয়ার সেফটি লিস্ট’ বা নিরাপদ আকাশ ভ্রমণ তালিকাটি আসলে একটি বিপজ্জনক সংস্থার তালিকা। এতে যেসব এয়ারলাইনস অন্তর্ভুক্ত আছে, সেগুলো বেশির ভাগই স্বল্প পরিচিত। এই এয়ারলাইনসগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড বা সেফটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে সক্ষম নয়। নেপালের ১৭টি এয়ারলাইনসের সবগুলো এই তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইকবাল হোসেইন কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাইলটদের কেমন সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় তা জানান।ইকবাল হোসেইন বলেন, ‘সেখানে রানওয়ে একপ্রান্তের ঠিক পেছনেই একটা পাহাড় রয়েছে। অবতরণের সময় প্রতিটি উড়োজাহাজকে ওই পাহাড় কাটিয়ে আসতে হয়। পাহাড়টা পার হওয়ার পর পরই পাইলটকে খুব দ্রুত মাটির কাছে নেমে আসতে হয়।’ ‘রানওয়ের বাম পাশে কিছুটা সমতল জায়গা রয়েছে, কিন্তু এর ডান দিকে রয়েছে গভীর একটা খাদ। প্লেন যদি রানওয়ে থেকে পিছলে যায়, তাহলে সেটা ওই খাদের মধ্যে গিয়ে পড়বে। ওটা পৃথিবীর ১০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক এয়ারপোর্টের একটি’ যোগ করেন তিনি।
২০১০ সালের আগস্ট মাসে সেখানে নেপালের অগ্নি এয়ারের উড়োজাহাজ খারাপ আবহাওয়ার কারণে অবতরণ করতে ব্যর্থ হলে দুর্ঘটনায় ১৪ জন প্রাণ হারায়। ২০১২ সালে একই রকম দুর্ঘটনায় ওই এয়ারলাইনেরই আরেকটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৫ জন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নেপালেরই তারা এয়ার টুইন অটারের দুর্ঘটনায় মারা যায় আরো ২২ জন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বুদ্ধ এয়ারের একটি উড়োজাহাজ কাঠামান্ডুর কাছাকাছি বিধ্বস্ত হলে নিহত হয় ১৯ জন। পরের বছর নেপালেরই সিতা এয়ারের একটি প্লেন উড্ডয়নের একটু পরেই মুখ থুবড়ে পড়লে নিহত হন ১৯ জন যাত্রী।
২০১৪ সালেও নেপালে বিমান দুর্ঘটনা চলতে থাকে। নেপাল এয়ারওয়েজের একটি টুইন অটার উড়োজাহাজ জুমলা থেকে পোখরা যাওয়ার সময় সেটির ১৮ জন যাত্রীর সবাই মারা যান। ২০১৬ সালে সেখানকার তারা এয়ারের একই রকম আরেকটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে ২৩ জন নিহত হয়। এর দুদিন পর এয়ার কাষ্ঠমণ্ডপের একটি প্লেন ১১ জন যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হলে দুজন নিহত হন। ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে সোমবার দুপুরে ত্রিভুবনে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এতে ৪৯ জন আরোহী নিহত হন। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।