কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ বা অপসারণের কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস করে না, বা সচিবও প্রশ্ন ফাঁস করে না। তাহলে তাকে কেন যেতে হবে।
সোমবার ইতালি সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা মনে করেন, পরীক্ষার আগে আগে প্রশ্ন পেলে তেমন একটা ক্ষতি হয় না। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেখে উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষার হলে গিয়ে লেখার মতো ‘ট্যালেন্ডেট’ কে আছে, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, ‘যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না।’
‘একটা কথা ছড়িয়েছে যে, শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করতে চেয়েছেন, আপনি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন-এটার সত্য মিথ্যা জানি না।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস- এটা নতুন কিছু না। এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরে চলে, কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না-এটা হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে গিয়ে বলেন, ‘মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গেছে? বা সচিব করেছে? বা যারা শিক্ষক তারা করেছে? হ্যাঁ, কিছু আছে যারা ক্যামেরা-ট্যামেরায় ছড়িয়ে দিচ্ছে, তেমন কিছু আছে।’
‘এটা নিয়ে একটা সুর তুলে একবার মন্ত্রীকে দায়ী, একবার সচিবকে দায়ী একবার সরকাকে দায়ী, আমরা কি নিজেরা এভাবে করতে যাচ্ছি?’
কারও পদত্যাগে সমাধান দেখেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ জন্য মন্ত্রীকে গালি দিতে হবে বা তাকে রিজাইন করতে হবে। সচিব কী বলল, তাকে চলে যেতে হবে। সচিব আর মন্ত্রী তো প্রশ্ন ফাঁস করে আসেনাই।’
আর কোনো দিকে দোষ না পেয়ে একটা দিকে খুঁচাখুঁচি চলছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। জানান, আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হতো। কিন্তু কিছু লোককে ধরার পর সেখানে আর প্রশ্ন ফাঁস হয় না।
শেখ হাসিনার দাবি, কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর পর সেখান থেকেই ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
‘২০ মিনিট আগে বা এক ঘণ্টা আগে তো প্রশ্ন চলেই যায় হলে। সেটা বিতরণ করার জন্য রুমে রুমে দিয়ে দেয়া হয়। তখন সবার হাতে মোবাইল, সবার হাতে ফোন, ছবি তুলে কেউ দিতে পরে।’
‘যখন প্রশ্নগুলো যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সেটা বিতরণ করার জন্য সব কিছু খুলে রাখা হয়। এখন যদি সেখানে চট করে একটা ফটো নিয়ে ছড়িয়ে দেয়, সাহলে সেটা কী করবেন?
আর পরীক্ষার যে সময় আগে প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে আসছে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ততটুকু সময়ে উত্তর বের করে তা মুখস্ত করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘এতো ট্যালেন্ডেট কে আছে?’
প্রশ্নগুলো সামাজিক মাধ্যমে পরীক্ষার ২০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আগে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, এতে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে প্রশ্নগুলো ফাঁস হয়েছে, সেটা কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে বলতে পারেন? সাধারণত কত দিন আগে? কুড়ি মিনিট আগে।’
‘এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন আমার আছে। আরেকটা প্রশ্ন মনে জাগে, এই যদি যদি ২০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা আগে যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে, একটা প্রশ্ন আমার, এত বেশি ট্যালেন্ডেট কে আছে?
‘এক ঘণ্টা আগে সাধারণত পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য ছাত্ররা প্রস্তুত হয়। হয় পথে থাকে বা যায়।…এই আধা ঘণ্টা আগে বা এক ঘণ্টা আগে বা ২০ মিনিট আগে প্রশ্ন দেখার পর ওই প্রশ্ন অনুযায়ী বই খুলে সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে সেটা স্মরণ করে খাতায় লেখার মতো ট্যালেন্ডেট কোন ছাত্র আছে?’
‘যদি ২৪ ঘণ্টা আগে হয় বা ১০ ঘণ্টা আগে হয় বা ১২ ঘণ্টা আগে হয় বা এক দিন আগে হয়, তাহলে একটা কথা।’
এমসিকিউ বাতিল হবে : এসএসসি পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তার সবই নৈর্ব্যক্তিক বা এমসিকিউএর। আর এ কারণে এমসিকিউ তুলে দেয়ার কথাই বলছেন প্রধানমন্ত্রী।
‘টিক মার্কটা বন্ধ করে দেবো। কারণ, ওখানেই তো সুবিধা বেশি, ঠিক আছে, ওটা বন্ধ করে দেবো। আপনারা লেখেন, আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। আমরা তো দেই নাই।’
তবে এমসিকিউএর ক্ষেত্রেও পরীক্ষার আগে আগে প্রশ্ন পেয়ে খুব একটা কিছু করা সম্ভভ নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ওই সময়েও বই খুলে উত্তর বের করা, সেখানে কয়েকশ প্রশ্ন থাকে, সেখানে কয়েকটা আসে, সেখানেও খুঁজে তাড়াতাড়ি কীভাবে বের করে?’
ফাঁসকারীদের খুঁজে বের করে দেন : গণমাধ্যম কর্মীদেরকেই প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের ধরিয়ে দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্বাস দেন, ধরিয়ে দিলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
‘আপনারা সাংবাদিক, আপনাদের এজেন্ট সব জায়গায় আছে। আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করি, আপনারা দয়া করে অন্তত একটা বের করে দেন, কে এটা করেছে, একজন কাউকে এটা বের করেন, সাথে সাথে আমরা শাস্তি দেব।’
খুঁজে দিলেই আমরা শাস্তি দিয়ে দেব। এখানে তো কোনা দ্বিধা নাই।