গোলাপগঞ্জে গৃহধূসহ ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ৩ জন জেল হাজতে

73

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জে গৃহবধূ ও ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দু’ই নরপশুকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে পুলিশ। গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলা আটক হওয়া যুবক গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির উত্তর কানিশাইল গ্রামের মৃত কুটুমনার ছেলে রেহান আহমদ (৩৫)। ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্র্ষণের ঘটনায় আটককৃতরা হলেন ভাদেশ্বর ইউপির পূর্বভাগ গ্রামের হাজী রেউল করিমের ছেলে কামরুল হাসান রুবেল (৩০) ও একই ইউপির পশ্চিম রায়গড় গ্রামের নুর উদ্দিনের ছেলে আহসান উদ্দিন নয়ন (২৭)। গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হন চলতি মাসের ১৬ ফেব্র“য়ারী ও একই মাসের ৯ই ফেব্র“য়ারী ধর্ষণের শিকার হন ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে এসব ধর্ষণের সকল আলামতও সংগ্রহ করেছে থানা পুলিশ। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার মাটিকাটা গ্রামের ভিকটিম গৃহবধূ (১৮) নিজে বাদী হয়ে ১৭ ফেব্র“য়ারী গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমি গত মাসের ২৭শে জানুয়ারী তারিখে আমার স্বামীর কর্মস্থল চট্টগ্রাম হতে আমার খালার বাসা সিলেট শহরস্থ রায়নগর রাজবাড়ী বসুন্দরা কোতয়ালী এসএমপি সিলেটে আসিয়া অবস্থান করি। পরবর্তীতে গত ১৫-০২-১৮ইং তারিখ আমার খালার বাসা হতে পুনরায় আমার স্বামীর কর্মস্থল চট্টগাম যাওয়ার উদ্দেশ্য দুপুর অনুমান ২টায় বাহির হইয়া সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশনে আসি। তথায় আমি ট্রেনের টিকিট না পাইয়া রেলের কম্পার্টমেন্ট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা একজন মহিলার সাথে আমার পরিচয় হয়। ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামা মহিলাটি তাহার সাথে তার বাড়ী শাহপরাণ এলাকায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। অতঃপর ঐ দিন আমি সরল বিশ্বাসে উক্ত অজ্ঞাতনামা মহিলার সাথে তাহার বাড়ীতে চলিয়া গেলে বিকাল অনুমান ৫ঘটিকার সময় মহিলাসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামী পরস্পর যোগসাজসে আমাকে জোরপূর্বক মুখে কাপড় বাঁধিয়া একটি অজ্ঞাতনামা সিএনজি গাড়ীতে উঠাইয়া অত্র গোলাপগঞ্জ থানাথীন উত্তর কানিশাইল গ্রামস্থ আটককৃত আসামী রেহানের বাড়ীতে আনিয়া একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে আসামী রেহান অজ্ঞাতনামা ২/৩জন আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আমি আসামীদের এহেন কর্মকান্ড হতে বাঁচার জন্য এদিক ওদিক দোড়াইয়া পালানোর চেষ্টাকালে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত প্রাপ্ত হই। গত ১৭-২ ১৮ইং তারিখে দুপুর অনুমান ১২টা ৩০ মিনিটের সময় আমি আসামীর বাড়ী হতে কৌশলে পালাইয়া আসিয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সিলেট শহরস্থ রায়নগর রাজবাড়ী বসুন্দরা কোতয়ালী এসএমপি সিলেটে বসবাসরত আমার মামা সৈয়দ ফারুককে ঘটনার বিস্তারিত জানাই। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ ও পরিবারের সদস্যদের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে গোলাপগঞ্জ থানায় আসিয়া মামলা দায়ের করি। এদিকে একই মাসের ৯ ফেব্র“য়ারী ধর্ষণের শিকার হন ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীর মা রাহেনা বেগম (৪৫) মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, আমার স্বামী মৃত এবং আমি বয়োবৃদ্ধ লোক। বাড়ীতে আমি আর আমার ৭ম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ে থাকি। আমার মেয়ে ১৩ সে স্থানীয় নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৭ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত। গত ০৯-০২-১৮ইং তারিখ বিকাল অনুমান ৫টা ৩০মিনিটের সময় আমার মেয়ে সে তার বান্ধবী তানজিনা এর বাড়ী নালিউরি গ্রামে যাওয়ার জন্য সিএনজিযোগে রওয়ানা হয়ে নালিউরি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে পৌছা মাত্রই আমার মেয়েকে বহনকৃত সিএনজি গাড়ীটিকে আটককৃত আসামীরা সিগন্যালের মাধ্যমে থামাইয়া গাড়ীতে উঠে। পূর্বেই উক্ত গাড়ীতে আরো অজ্ঞাতনামা ২জন ব্যক্তি ছিল। রাস্তার পথিমধ্যে গাড়ী হতে নামিয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত বিবাদী ও পরস্পর যোগসাজসে জোরপূর্বক আমার মেয়ের গলায় চাকু ধরিয়া তাহাকে অপহরণ করিয়া বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাঘুরি করিয়া ঢাকাদক্ষিণ বাজারে আসিয়া অপর একটি সিএনজিতে আমার মেয়ে উঠাইয়া ওইদিন সন্ধ্যা অনুমান ৭টা ৩০ মিনিটের সময় ১নং বিবাদী মোঃ কামরুল হাসান রুবেলের নিজ বসত বাড়ীতে নিয়া গিয়া একটি রুমে আমার মেয়েকে আটক রাখিয়া ১নং বিবাদী কামরুল হাসান রুবেল ভয় ভীতি দেখাইয়া আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাহাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে অধ্য ১১-০২-১৮ইং তারিখে সকাল অনুমান ১১টা ৩০ মিনিটের সময় আমার মেয়ে কৌশলে বিবাদীদয়ের কবল হইতে ছুটিয়া আমার বাড়ীতে চলিয়া আসিয়া আমাকে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। আমি আমার মেয়ের নিকট হইতে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়া উক্ত বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য লোকজনদের অব্যহতি করিয়া গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় এজাহার দাখিল করি। শনিবার গভীর রাতে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামী রেহান আহমদ (৩৫) কে পুলিশ আটক করে। ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় কয়েকদিন আগে অভিযুক্ত দুই লম্পটকে আটক করে শ্রীঘরে পাঠায় পুলিশ। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ধর্ষণের ঘটনায় আটককৃত আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।