জেড.এম. শামসুল :
আজ ৯ ফেব্র“য়ারি ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকার অলিতে গলিতে সভা-সমাবেশ চলতে থাকে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ সর্বত্র গঠন হতে থাকে। এ মাসে কবি ফররুখ আহমদ সওগাত পত্রিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্যে এক প্রবন্ধে লিখেছেন, গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা পর্যন্ত যারা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তর করতে চান তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সকল আধিবাসীর সঙ্গে আমিও এ রকম অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনের অব্যাহত ধারায় ১৯৪৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলা ভাষায় উর্দু হরফ গ্রহণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অধ্যাপক আবুল কাসেমের বাসায় অধ্যাপক শায়েদ আলীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাপক আবুল কাসেম, মোঃ তোহা, সানাউল্লাহ নুরী, সাহিত্যিক মোঃ আব্দুল ওদুদ, ভাষা চক্রান্তকারীদের প্রস্তাবিত বাংলাভাষার জন্য উর্দু হরফ গ্রহণ নিতান্তই মারাত্মক বলে উল্লেখ করেন। এদিন সাপ্তাহিক সৈনিকে “বাংলার সংস্কৃতি হত্যার ষড়যন্ত্র” শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। এ প্রবন্ধে বলা হয় বাংলার লিপি পরিবর্তনের চোরাপত্রে সাড়ে ৪ কোটি বাঙালির মাতৃভাষাকে কতল করার পরিকল্পনাকে সহজে সফল হতে দেয়া হবে এ কথা মনে করে তাহলে বিরাট ভুল করা হবে। এ প্রবন্ধে পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেককে লিপি বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ করেন। ভাষাকে কেন্দ্র করে আমাদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনে যে অশুভ ছায়া বিস্তৃত হচ্ছে, সময় থাকতে না রুখলে পরিণামে তা আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এ বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এক সভায় আরবী হরফে বাংলা প্রবর্তনের প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদে এক সভা ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। এ সভায় বক্তব্য রাখেন আব্দুল গফুর, সানাউল্লাহ নুরী, শাহাব উদ্দিন, আব্দুল মতিন, অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, মোবাশ্বের আলী প্রমুখ। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন প্রাঙ্গণে বিশাল এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা আরবী হরফে বাংলা লেখার নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন এ চেষ্টা সফল হলে শিক্ষা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার অপমৃত্যু ঘটবে বলে মন্তব্য করেন। এদিন একটি ছাত্র প্রতিনিধি দল পূর্ব বাংলার ব্যবস্থা পরিষদের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে বাংলা হরফের পক্ষে সমর্থন করার আহ্বান জানান। এ দিনই ইকবাল হলের ছাত্ররা এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। একই দিন জগন্নাথ কলেজ ও ইডেন কলেজে ছাত্রছাত্রীরা কলেজ মিলনায়তনে আরবী হরফ প্রবর্তনের প্রতিবাদে সমাবেশ করে। এইদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।