স্টাফ রিপোর্টার
দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি এলাকার আইনজীবীর মা ধনাঢ্য মহিলা মোচ্ছা: আনোয়ারা খাতুন উরফে সোনারা বেগম হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন ও একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। গতকাল বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের নয়াপাড়ার মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র মো: আবু শহীদ উরফে মো: আব্দুস সহিদ কামালী (২৬) ও একই উপজেলার বরইকান্দি ইউনিয়নের কাজিরখলা উত্তর গ্রামের মৃত দুদু মিয়ার পুত্র মো: ছালিক মিয়া (৩৫) এবং খালাসপ্রাপ্ত বরইকান্দি কাজিরখলা গ্রামের আব্দুল খালিক লন্ডনীর পুত্র রাজু আহমদ উরফে রাজু (২২)। অপর আসামী মিন্টু মিয়া মামলা চলাকালীন সময়ে মারা যান। রায় ঘোষণার সময় দন্ড ও খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি কাজিরখলা গ্রামের মৃত মস্তান মিয়া উরফে গাবরু মিয়ার স্ত্রী মোচ্ছা: আনোয়ারা খাতুন উরফে সোনারা বেগম (৬৫) এর ৩ মেয়ে ও ৩ ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হওয়ার পর তাদের স্বামীর বাড়িতে থাকেন এবং ছেলে ৩ জনই লন্ডন প্রবাসী। তিনি বাড়িতে একা থাকতেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে তিনি সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাড়ির কাজের জন্য সেলিনা (৫৫) নামের এক মহিলাকে নিয়ে আসেন। সোনারা বেগম যে রুমে ঘুমাতেন সে রুমের ফ্লোরের মেঝেতে কাজের মহিলা সেলিনাও ঘুমাতো। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর রাত পৌনে ১২ টার দিকে সোনারা বেগমের মেয়ে নুরজাহান বেগমের মোবাইলফোনে একটি কল আসে। ওই সময় ওপ্রাপ্ত থেকে তাকে জানায়, তোর মার থোতা অনেক বড়, তোর মাকে উচিত শিক্ষা দেব বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন ভোররাতে জায়গা জমি বিরোধের জের ধরে আসামীরা কাজের কথিত মহিলা সেলিনার সহযোগিতায় ঘুমন্ত অবস্থায় আনোয়ারা খাতুন উরফে সোনারা বেগমকে দা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ঘর থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ১৪ লাখ টাকা দামের স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন ২৫ অক্টোবর সকাল ৯ টার দিকে তার আত্মীয়-স্বজন ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেয়ার পথে আনোয়ারা খাতুন উরফে সোনারা বেগম মারা যান। পুলিশ ওইদিন সোনারা বেগমের বিছানার পাশ থেকে রক্তমাখা ধারালো একটি দা ও তার ব্যবহৃত একটি মোবাইলফোন উদ্ধার করে। কিন্তু কাজের মহিলা কথিত সেলিনাকে আর খোঁজে পায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত সোনারা বেগমের মেয়ে আইনজীবী মোচ্ছা: জাহানারা বেগম বাদি হয়ে একমাত্র কথিত কাজের মহিলা সেলিনার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ১২ (২৫-১০-২০১০)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২২ জুন সিলেট গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো: আব্দুল আউয়াল চৌধুরী আসামী আব্দুস শহীদ কামালী, ছালিক মিয়া, মিন্টু মিয়া ও রাজু আহমদকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ওই ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালত চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে এ মামলার বিচারকায্য শুরু করেন। এর মধ্যে মামলা চলাকালীন সময়ে আসামী মিন্টু মিয়া মারা যান। দীর্ঘ শুনানী ও ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামী আব্দুস শহীদ কামালী ও ছালিক মিয়াকে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে উল্লেখিত দন্ডাদেশ এবং রাজু আহমদকে খালাস প্রদান করেন। গতকাল বুধবার রায় ঘোষণার সময় মামলার বাদী এডভোকেট মোচ্ছা: জাহানারা বেগম কানাডায় থাকায় তার অপর বোন নুরজাহান বেগমসহ তাদের আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট মাসুক আহমদ ও আসামীপক্ষে এডভোকেট মো: লুৎফুল কিবরিয়া শামীম, মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ, মো: আব্দুল্লাহ এবং বাদী পক্ষে এডভোকেট মো: আখলাকুল আম্বিয়া মামলাটি পরিচালনা করেন।