শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শুরু ॥ অসামাজিকতা রোধে তৎপর থাকবে প্রশাসন

48

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর মিলনস্থল ওসমানীনগরের সীমান্তবর্তী শেরপুরে ৩ দিনব্যাপি মাছের মেলা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এ মেলা বছরে একবার অনুষ্ঠিত হলেও মাসাধিক কাল আগ থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় থাকে এ মেলাকে ঘিরে। কুশিয়ারা নদীর উত্তর তীরবর্তী এলাকায় ঐতিহ্যবাহী এই মেলাস্থলকে নানা রঙ্গে সাজানো হয়েছে। মেলার এই রঙ্গিন সাজে এলাকায় সাজ-সাজ রব বিরাজ করছে। মেলাকে সামনে রেখে মেলাস্থলে কয়েক একর ফসলী জমিতে সহস্রাধিক দোকানপাট সাজাতে ব্যস্ত রয়েছেন ব্যাবসায়ীরা। প্রতিবারের মতো এবারো মাছের পাশা পাশি মেলায় শুভা পাবে কাঠ ও কাঠজাত সামগ্রী, লোহার তৈরী বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, হস্তশিল্প সামগ্রী আর ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনার দোকান বসাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২শত বছরের ঐতিহ্য এ মেলা সিলেটের সবচেয়ে বড় মেলা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। আগে সপ্তাহব্যাপী এ মেলা চলতো। কয়েক বছর যাবত নিরাপত্তার অভাবে তা সীমিত পরিসরে নিয়ে আসা হয়। এক সময় এ মেলা মনুমুখ বাজারে মনু নদীর তীরে বসতো। নদী ভাঙ্গন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কালের আবর্তে তা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরের ব্রাম্মন গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাছের মেলাকে ঘিরে সিলেট বিভাগের মিলনস্তর শেরপুর পরিনত হয় মানুষের মিলন মেলায়। এ মেলায় বড়-বড় মাছ প্রদর্শনীসহ বিক্রয় হয়। সুরমা-কুশিয়ারা-মনু নদীসহ বিভিন্ন হাওরের বড় মাছসহ দুস্প্রাপ্য অনেক মাছ এ মেলাতে পাওয়া যায়। পৌষ পার্বণে প্রতিটি হিন্দু পরিবারের বড় মাছ কেনার রেওয়াজ আছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও মাছের মেলা থেকে মাছ কিনে হিন্দু বাড়িতে উপহার দেন। এছাড়া মেলা উপলক্ষে প্রবাসে অবস্থানকারী সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদের দেশে আগমন ঘটে। মূলত; এটি মাছের মেলা হলেও বিভিন্ন ভৈজস ও গৃহস্থালী সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায় বলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলায় আগত মানুষের ঢল নামে এখানে। তবে এই মেলাকে পুঁজিকে করে বিগত দিনে স্থানীয় কথিপয় প্রভাবশালী মহল মেলাস্থল ইজারা নিয়ে অধিক মুনাফার আশায় জুয়া আসর, যাত্রা, অসামাজিক কার্যকলাপ, অশ্লীল নৃত্য ও পুতুল নাচের আয়োজন করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তুগত বছর প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকায় মেলাকে ঘিরে কোনো অনৈতিক ও অসামাজিক হয়নি বা জুয়ার আসরও বসেনি। এ বছরও অধিক মুনাফা লাভের আশায় মেলায় নানা রকম অসামাজিকতার আয়োজন করতে মেলার আয়োজকরা নানা কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তবে মেলায় যাতে কোন ধরনের অসামাজিকতা না হয় সে ব্যাপারে গত বছরের ন্যায় এবারও প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবু সাঈদ বলেন, এলাকার প্রথা অনুযায়ী সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ না নয় সে জন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।