৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট নিয়ে ॥ দেশের প্রথম ইলেকট্রনিকস সিটি স্থাপিত হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জে

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ইলেকট্রনিক সিটি। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোম্পানীগঞ্জের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির তত্ত্বাবধানে খনিজ সম্পদ ও পর্যটনে সমৃদ্ধ কোম্পানীগঞ্জে গড়ে তোলা হচ্ছে এ ইলেকট্রনিক সিটি। সারাদেশে ১০টি ইলেকট্রনিক সিটি নির্মাণের আওতায় নির্মিত হচ্ছে এ সিটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পে মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় শতাধিক ড্রেজার। সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ লাখ ঘনফুট মাটি ফেলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্প এলাকায় একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আরেকটি ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের ২০তম কিলোমিটার প্রকল্পটির অবস্থান। সড়কটির বর্ণি গ্রামের পূর্ব পাশে খলিতাজুড়ি বিলের পাশে এ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৬২ একর জমি। অধিগ্রহণ করা ভূমির পাশেও রয়েছে বেশ কিছু খালি জমি।
প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার গোলাম সারওয়ার জানান, এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের পাশাপাশি একটি প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এর ফ্লোরের আয়তন ৩১ হাজার ৭৭ বর্গফুট। আরেকটি ভবনের নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে। তিনি জানান, এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান ব্যারিস্টার সারওয়ার।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মো: আব্দুর রহিম জানান, যোগাযোগসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ রাস্তার সংস্কার কাজও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের অনতিদূরে সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরের অবস্থান। প্রকল্প এলাকায় বেশ কিছু খালি জায়গাও রয়েছে। তিনি জানান, আগামীতে প্রকল্পের ভূমির পরিমাণ এক হাজার একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ জানান, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এই প্রকল্প স্থাপন এই এলাকার মানুষের জন্য বড় একটি সুযোগ। তিনি স্থানীয় লোকজনকে এ সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি এই এলাকার শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টু জানান, কোম্পানীগঞ্জে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। সেখানে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে, ভোলাগঞ্জ জিরো লাইনসহ বেশ কয়েকটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে ইলেকট্রনিক সিটি। এ কারণে এলাকার মানুষ উৎফুল্ল বলে জানান তিনি।
থাকবে যে সব সুবিধা : প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট ইলেকট্রনিক সিটিতে তিন ধরণের সুবিধা থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আইসিটি পার্ক এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক প্রকল্প।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ইলেকট্রনিক পণ্য, যন্ত্রাংশ এবং সফটওয়্যার উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্প এলাকায় দুটি অংশ থাকবে। একটি অংশে থাকবে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। অন্যটিতে আবাসন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শপিং সেন্টার ইত্যাদি থাকবে। প্রকল্পের ম্যাপে সব মিলিয়ে ৪০টি স্থাপনা, সেবাপ্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ আছে।
স্থাপিত হচ্ছে ইমরান আহমদ টেকনিক্যাল কলেজ : কোম্পানীগঞ্জে ইলেকট্রনিক্স সিটি স্থাপিত হলেও সেখানে নেই কোন টেকনিক্যাল কলেজ। এমন বাস্তবতায় প্রকল্পের অনতিদূরে দলইরগাঁও এলাতায় গড়ে তোলা হচ্ছে ইমরান আহমদ টেকনিক্যাল কলেজ। কোম্পানীগঞ্জের ছেলে-মেয়েদের তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।