জামালগঞ্জে হাওরপারের প্রাথমিক শিক্ষার অবনতি, প্যারা শিক্ষকেই ভরসা

121

নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হাওর পারের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকদের নিয়মিত স্কুল ফাঁকি, দায়িত্বে অবহেলা, কাজে অনিয়মের কারণে শিক্ষার অবনতি হচ্ছে। স্কুল সরকারি করণ শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিনা মূল্য বই বিতরণ সহ সরকারের সকল কার্যক্রম ব্যর্থ হতে চলছে। এসব স্কুলে লক্ষ লক্ষ টাকা সরকার বিনিয়োগ করেও কতিপয় অসাধু শিক্ষকের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীগণ। অভিভাবকরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার অভিযোগ দেবার পরও এসব শিক্ষকদের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না অভিভাবক মন্ডলী। অদৃশ্য শক্তির কারণে বরাবরই তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। এমন কজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আমার প্রতিবেন। শিক্ষক মো: শাহজাহান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হাওরিয়া আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুলে ২০১৫ সালে বদলি হয়ে যোগদান করেন। আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অবনতি হতে থাকে। ঘনঘন স্কুল ফাঁকি দিতে শুরু করেন। কেউ কিছু বললে কিছুই করতে পারবে না বলে অদৃশ্য খুঁটির জোর দেখান। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বদলী হয়ে যাবার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রধান হওয়ায় ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। এবার আর কোন বাধা নেই। নিয়মিত স্কুল ফাঁকি আর পছন্দের লোকজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি করেন। অবাক হওয়ার মত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজ গ্রামের স্কুল থেকে ১০ কি: মি: দূরত্বে মিউচ্যয়ালি বদলি হয়ে আসেন জনৈকা শিক্ষিকার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এছাড়া ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের সিল্প প্রজেক্টের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার উপর। এসব বিষয় নিয়ে গ্রামের অভিভাবকগণ চলতি বছরের ২০ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেন। তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ ও অনুপস্থিতির ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মো: শাহজাহান বলেন আমি ছুটি নিয়ে মাকে ডাক্তার দেখাতে সিলেট আছি। অভিযোগ সঠিক নয়।
মো: ফয়েজ আহমদ প্রধান শিক্ষক মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মনে হয় যেন স্কুল ফাঁকির উদ্দেশ্যে যোগদান। স্কুল ফাঁকি নিয়মে পরিণত হয়ছে। মিউচ্যয়েলি বদলি হয়ে আসেন সুবিধা নিয়ে। ৬০ কি:মি: দূরত্বের হাওরের নির্জন এলাকা মাহমুদপুর স্কুলে। ছিলেন নিজ বাড়ীর পাশে শাহাপুর আব্দুল বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কখনও স্কুল করেন না। প্রতিদিন উপজেলা সদরের অলিগলিতে দেখতে পান অনেকেই। হাওর পারের নির্জন স্কুল হওয়ায় এমন শিক্ষকের জন্য সুবিধাই হয়। এমন মনোভাবাপন্ন শিক্ষক দিয়ে কি শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করা যায়? ফয়েজ মাষ্টার নিজেকে মানুষগড়ার কারিগর ভাবতে পারেনি। অনেক সময় শোকজ বেতন ভাতা বন্দ হলেও অদৃশ্য শক্তির বলে নিমিষেই সমাধান করে ফেলেন।
গত জুন মাসে উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের একটি টিম স্কুল পরিদর্শনে গেলে হাওরিয়া আলীপুর, মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক সহ ঐ এলাকার আরও ৪টি স্কুল তালাবন্ধ পাওয়া যায়। কোন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না ঐদিন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে শিক্ষকদের শোকজ করা হয়। কিছুদিন পূর্বে জেলা প্রশাসক হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি দেখতে পান। দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ করেন উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে।
এরপর গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আল ইমরান স্কুল পরিদর্শনে যান। সেখানে হাওরিয়া আলীপুর একজন সহকারি শিক্ষক ও মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন বৃদ্ধ প্যারা শিক্ষক উপস্থিত পান। এই প্যারা শিক্ষক দিয়েই চলে স্কুলের পাঠদান। অন্যান্য শিক্ষকরা রয়েছে অনুপস্থিত। এ সময় গ্রামের অভিভাবকদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনে আসেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি অফিসার উপজেলা শিক্ষ অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এলাকাবাসী বলেন অতীতের মত নয় এসব দুষ্কৃতিকারী শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি চাই। হাওর পাড়ে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠুক এই প্রত্যাশা তাদের।