সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার হাটবাজারগুলোতে গবাদিপশু জবাই এবং মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি বিধি নিষেধ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। রয়েছে মরা পশু জবাই করে বিক্রি ও কুকুরের মাংস বিক্রির অভিযোগও। নেই সরকারী পশু পরীক্ষার কসাইখানা। এ উপজেলায় কসাইখানা না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগাক্রান্ত গরু, মহিষ, ছাগল জবাই করা হচ্ছে। কোনো কোনো সময় সড়কের উপরও জবাই করা হয় গবাদি পশু। কোনরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গবাদিপশু জবাই করে ক্রেতাদের কাছে এসব মাংস বিক্রি করা হয়। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মচারীদের সাথে যোগসাজসে প্রতিদিন এ অনিয়ম করে যাচ্ছে। অথচ সরকারি বিধান মতে, মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে কোনো পশু জবাই করার পূর্বে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত কিনা এবং মাংস স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা একজন সরকারি পশু ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক সিল মেরে তা বাজারে বিক্রির অনুমতি প্রদান করতে হয়। কিন্তু গোলাপগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার কোথাও এটা মানা হচ্ছে না। উপজেলার গোলাপগঞ্জ প্রধান বাজার, ঢাকাদক্ষিণ বাজার, ভাদেশ্বর বাজার, হেতিমগঞ্জ বাজার, নারাপিং বাজার, বাদেপাশা বাজার, লক্ষণাবন্দ বাজার, শরিফগঞ্জ বাজার, আমুড়া বাজার, বাধবারীবাজার, বাঘার বাজারসহ বেশ কয়েকটি হাটবাজারের মাংসের দোকানে সরজমিনে গিয়ে বিক্রেতাদের সাথে স্বাস্থ্যসনদ সম্পর্কে কথা বলে জানা যায়, কোনো মাংস বিক্রেতাই স্বাস্থ্য সনদ নেওয়ার বিষয়টি জানেন না। এমনকি জবাইয়ের আগে পশু পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার বিষয়টিও অনেকের অজানা। গবাদিপশু জবাই এবং মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা, খোলা মাংস বিক্রি না করা এবং মাংসের দোকানে স্যানিটেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাটবাজারগুলোর কোনো মাংস দোকানেই তা মানা হচ্ছে না। শহরের লাইসেন্সবিহীন মাংসের দোকানগুলোসহ গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী, বাজার চৌমুহনী ও ঢাকাদক্ষিণ বাজারে অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের সাথে মহিষের মাংস ও টাটকা মাংসের সাথে বাসি মাংস মিশিয়ে এবং বকরী কিংবা পাঠার মাংসকে খাসীর মাংস হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেলেও এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সময়ে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ বাজারের বিভিন্ন মাংস ব্যসায়ীদের বিরুদ্ধে মরা পশু জবাই করে বিক্রি ও কুকুরের মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠে। পরে তাদেরকে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, সরকারী ভাবে একটি কসাইখানা থাকার কথা প্রতিটি উপজেলায়। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সরকারী কোন কসাইখানা নেই, এজন্য পশু পরীক্ষা ও সীল মারার কোন সুযোগও নেই। তবে আমরা নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন মাংসের দোকানগুলো মনিটরিং করছি। মরা পশু বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকাদক্ষিণের একজন কসাই মৃত পশু জবাই করে বিক্রি করার সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে আটক ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদ আহমদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টরকে সাথে নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় পশুর মাংসের দোকান মনিটরিং করছি। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্টেট (ভূমি) মামুনুর রহমানের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন,মাঝে মধ্যে এসব দোকানগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এসব নির্মুল করতে আমাদের জনসচেতনতা প্রয়োজন। খুব শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।