সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাটে নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা থাকলেও গ্যাস এর অনুমতি না পাওয়া তা আগামী মাসে চালু হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে পেট্রোবাংলা থেকে সম্মতি আসলেই তাদের অনুমতি পেয়ে যাবে। তবে গ্যাস এর অনুমতি এক সপ্তাহও লাগতে পারে আবার তা একমাসও হতে পারে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ গ্যাস টি এন ডি সিস্টেম লিমিটেড এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম।
বন্দিদের আধুনিক জীবনের নানা সুযোগ সুবিধা দিতেই সিলেট নগরী থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাটে ৩০ একর জমির উপর নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালে দু’শ ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কারাগার নির্মাণ এর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তবে ওই বছর আগষ্টে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হলেও ২০১২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গেল বছর জুলাইয়েও কাজ শেষ হয়নি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়ে তা উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও আবারো তা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
নতুন কারাগারের সকল কাজ শেষ হলেও সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এর কাজ, পুকুর খনন ও গ্যাস সংযোগের অনুমতি না পাওয়ায় আগামী মাসে সেটি উদ্বোধনের অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। সুয়ারেজ ট্রিপমেন্ট প্ল্যান্ট ও পুকুর খননের কাজ ছাড়াও উদ্বোধন করা যাবে। তবে গ্যাসের অনুমতি না পাওয়ায় সেটির উদ্বোধন আবারও আশার মাঝেই থেকে গেলো।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের সকল কাজই সম্পন্ন হয়েছে। তবু এখনও সুয়ারেজ ট্রিট প্ল্যান্ট এর কাজ, পুকুর খননের কাজ ও গ্যাসের অনুমতি আমরা পাই নি। পানি কিছুটা কমলেই আমরা পুকুর খননের কাজ শুরু করে দিবো। সেটি কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৭ মিটার গভীরতা করতে হবে। তার মধ্যে সুয়ারেজের কাজটা নতুন। এটি শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে এখনও পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের অনুমতি আমরা পাইনি। অনুমতি পেলেই আমরা গ্যাস সংযোগের কাজ শুরু করে দিবো। আমরা আশা করি ডিসেম্বরের মাঝেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর কারাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছিল। সে ব্যাপারে মিজান বলেন, আমরা এটি শুনেছি ও কিছু সংবাদ মাধ্যমেও দেখেছি। তবে কোন মিটিংয়ে বা কাগজপত্র এ ব্যাপারে আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
এদিকে গ্যাস সংযোগ অনুমতির ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস টি এন ডি সিস্টেম লিমিটেড এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, পেট্রোবাংলা থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি আসার কথা। তাদের সস্মতি আসলেই তারা অনুমতি পেয়ে যাবেন।
কবে নাগাদ সম্মতি আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কবে আসতে পারে সেটি সঠিক বলা যাচ্ছেনা। সময় লাগবে। ৭ দিনেও আসতে পারে। আবার সেটি এক মাসও সময় লাগতে পারে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জরাজীর্ণ পরিবেশ ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ ও তাদের মানবেতন জীবনযাপনের বিষয়টি বিবেচনায় এনে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
নির্মাণাধীন কারাগারে দুই হাজার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, একশ শয্যার পাঁচ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ২০ শয্যার মানসিক হাসপাতাল, ২৫ শয্যার টিবি হাসপাতাল, স্কুল ও লাইব্রেরি ভবন ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ১৩০টি ফ্ল্যাট ।
১৭৮৯ সালে সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থল ধোপাদীঘির পারে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল সিলেট জেলা। নির্মাণের সময় থেকে নানা সময়ে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ এবং ১৯৯৭ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরের পর এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ জনে। (খবর সংবাদদাতার)