হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন, ২ জন খালাস

21

স্টাফ রিপোর্টার
দক্ষিণ সুরমা ঝালোপাড়ায় ব্যবসায়ী জি এম অমর খালেদ সুমন হত্যা মামলার ৫ বছর পর ২ চাচাতো ভাইকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ের পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত ২ আসামীকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালিম চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- বর্তমানে দক্ষিণ সুরমা থানার ঝালোপাড়া আঞ্জুমান হাউজ স্বপ্ননীড় ৬৬ নং বাসার মৃত আব্দুল মালিকের পুত্র শোভন (২৬) ও একই বাসার তার চাচাতো ভাই আব্দুল হাইয়ের পুত্র সায়মন (২৫) এবং খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের চাচাতো ভাই শাহান (২৩) ও চাচা কুদ্দুছ মিয়া (৫৪)। রায় ঘোষণার সময় সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, একই বাসার আব্দুস সাত্তারের পুত্র জি এম অমর খালেদ সুমন একজন সুনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তার মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। সুমন একা পরিববার নিয়ে বাসায় থাকতেন। আসামীদের সাথে জমি-জমা নিয়ে পারিবারিক ভাবে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে সুমনের সাথে আসামীদের প্রায় সময় ঝগড়া হতো। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালের ৪ ফেব্র“য়ারী বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সুমনের ছেলে ফারদিন একই বাসার শোভনদের উঠানে যায় এবং তাকে ডেকে আনার জন্য তার পিতা সুমন সেখানে গেলে এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সুমনের চাচাতো ভাই শোভন, সায়মন, শাহান, চাচা আব্দুল মালিক, আব্দুল হাশিম ও কুদ্দুছ মিয়াসহ অজ্ঞাত ২/৩ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুমনের মাথায়, বুকে আঘাত করলে সুমন গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার শোরচিৎকারে তার স্ত্রী ও অন্য লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট ওসমানী হাসাপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে ওইদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ উমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জি এম অমর খালেদ সুমন মারা যান। এ ঘটনায় নিহত সুমনের স্ত্রী মোচ্ছ: ইসরাত জাহান তারানা বাদি হয়ে শোভন, সায়মন, শাহান, আব্দুল মালিক, আব্দুল হাশিম ও কুদ্দুছ মিয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৮ (০৫-০২-২০১১)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানার এসআই নুর মোহাম্মদ আসামী আব্দুল হাশিমকে অব্যাহতি দিয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১২ সালে ১৪ নভেম্বর থেকে আদালত এ মামলার বিচারকায্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১৫ সাক্ষীর মধ্যে ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামী শোভন ও সায়মনকে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে উল্লেখিত দন্ডাদেশ প্রদান করেন এবং অপর আসামী শাহান ও কুদ্দুছ মিয়ার অপরাধ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। এছাড়া মামলা চলাকালীন সময়ে আসামী আব্দুল মালিক মারা যান।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট মাসুক আহমদ ও আসামী পক্ষে এডভোকেট মো: আব্দুল মওদুদ মামলাটি পরিচালনা করেন।