জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ থেকে :
দৈনিক কাজিরবাজার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে সেই প্রেমিক ইউপি সদস্য ইরণ মিয়াকে (৩২) গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। বুধবার দৈনিক কাজিরবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিয়ের দাবিতে ইউপি সদস্যের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর চোখ খুলে থানা পুলিশের। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেমিকা নিলুফার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইরণ মেম্বারকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে অন্ত:সত্তা প্রেমিকার চাপে বিয়েতে অসম্মতি জানালে ১৩ আগষ্ট বিষপান করেন প্রেমকিা নিলুফা। পরে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর ১৫ আগষ্ট নিলুফার মা রিনা বেগম মেয়েকে নিয়ে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে মামলা দিতে চান। কিন্তু থানা পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম তাদের মা ও মেয়েকে থানা থেকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন নিলুফার মা রিনা বেগম।
এদিকে ইউপি সদস্যকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম। তিনি ‘দৈনিক কাজিরবাজার’কে বলেন, থানার এসআই বিনয় চক্রবর্ত্রীসহ একদল পুলিশ নিয়ে গোপন সংবাদে সিলেট মেডিকেল এলাকা থেকে ইউপি সদস্য ইরন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। প্রেমিক ইরন মিয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ও পূর্ব-পাড়া নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আস্তফা মিয়ার ছেলে।
এরআগে গত ঙ্গলবার বিয়ের দাবিতে ইউপি সদস্য প্রেমিক ইরন মিয়ার (৩২) বাড়িতে অনশন পালন করেন প্রেমিকা আপন চাচাতো বোন নিলুফা বেগম। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘন্টা অনশনের পর থানা পুলিশের এসআই বিনয় চক্রবর্তী একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিলুফাকে ইরন মিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করেন। পরে আইনী সহযোগিতা ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন ও নূর উদ্দিনসহ আরও গন্যমান্য ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে নিলুফাকে থানায় নিয়ে যান। ওইদিন সন্ধ্যায় নিলুফা থানায় ইউপি সদস্য ইরন মিয়ার মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের সামন থেকে পুলিশ ইরণ মিয়াকে গ্রেফতার করে।
প্রেমিকা নিলুফার দাবি, প্রেমিক ইরন মিয়াকে নিয়েই প্রেমিকা নিলুফা বাঁচতে চান সংসার করতে চান। আর তা না হলে এ জীবন আর রাখতে চাননা তিনি। কারণ বিয়ের প্রলোভনে ২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ ৮বছর ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাকে। ২০১৭ সালের ১৩ আগষ্ট হঠাৎ অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়লে বিয়ের দাবি করায় ক্ষেপে যান ইরন। বারবার বিয়ের আশ্বাস দিলেও নানা অজুহাতে সময় পার করেন তিনি।
এদিকে, অনশনের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ইরন মেম্বারের বাড়ি থেকে নিলুফাকে নিয়ে থানায় রওয়ানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর পরই ইরন মেম্বারের বড়ভাই চন্দন মিয়া (৩৪) ও নিলুফার চাচাতো ভাই রফিক মিয়ার ছেলে ফকরুল মিয়ার (২৫) মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে একে অপরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চন্দন ও ফকরুল গুরুতর আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের দু’জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আহত দুই চাচাতো ভাই ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।