জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
চারদফা দাবী আদায়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শ্রমিকরা সন্ধ্যার দিকে তাদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেন, বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক সংস্কার শুরু হবে। অটো বাইক, টমটমসহ অবৈধ পরিবহণের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চাকুরীজীবী লোকজন ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে কোন ধরণের পরিবহন না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। প্রতিটি বাজারে ব্যবসা বানিজ্যে ধস নেমেছে। জকিগঞ্জ স্থল শুল্ক ষ্টেশনে ব্যবসা বাণিজ্যে লোকসান দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা পরিবহন না পেয়ে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় ধর্মঘট পালন করছেন। জকিগঞ্জগামী কোন ওষুধের গাড়ীও শ্রমিকরা আসতে দেয়নি। রোগী বহনকারী গাড়ীগুলোও আটকে দিয়েছিলো। ধর্মঘট পালনকারী পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে বুধবার উপজেলা পরিষদের মিলানায়তনে পরিবহন শ্রমিকরা জকিগঞ্জবাসীকে জিম্মি করার প্রতিবাদে সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার ডাক দেয়া হয়েছে। সোমবার উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কড়া প্রতিবাদ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। সভায় প্রস্তাব করা হয়, যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যদিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার অনুমতি নিয়ে অটো বাইক, টমটম চালানোর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
মঙ্গলবার সড়কে দাঁড়িয়ে পরিবহণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একযাত্রী বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা একহাতে ব্যবসা করতে ছোট পরিবহনগুলোকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চায়। তারা জকিগঞ্জের মানুষদের জিম্মি করে তাদের দাবী আদায়ে ব্যস্ত। পরিবহন শ্রমিকদের চার দফার মধ্যে তিন দফার সাথে জনগণের কোন স্বার্থ নেই। আমরা তাদের ঘোষিত একটি দাবী ব্যতিত অন্য দাবিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করছি। অটো বাইক, টমটমের কারণে যাত্রীদের চলাচল সুবিধা হয়। জকিগঞ্জ সড়কে অটো বাইক টমটম দিয়ে যাত্রীসেবা দিতে অটো বাইক চালকদেরকে যাত্রীরা আহবান জানিয়েছেন।
জকিগঞ্জ পৌরসভা পশ্চিম ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির সহ সভাপতি হালিম আহমদ বলেন, অন্য পরিবহনগুলোর চাইতে অটো বাইক টমটম ভাড়া কম আদায় করার কারণে বাস ও অবৈধ লেগুনা গাড়ী অহেতুক ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জকিগঞ্জের মানুষকে জিম্মি করেছিলো। কিন্তু সাধারণ যাত্রী তাদের ধর্মঘটকে প্রত্যাখ্যান করে আমাদেরকে গাড়ী চালানো অনুরোধ করেছেন। আমরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জকিগঞ্জ উপজেলা ইজিবাইক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, টমটম গাড়ী বন্ধ করা হলে যাত্রীদের চলাচলে বিঘœ হয়। শতশত পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। টমটম শ্রমিকরা বেকার হলে এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পাবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ বলেন, জকিগঞ্জের মানুষকে জিম্মি করে নিজের স্বার্থ আদায় করা কাম্য নয়। আমি পরিবহন শ্রমিকদের অনুরোধ করেছিলাম ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে শ্রমিক নেতাদের নিয়ে। বৈঠক থেকে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে উনারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন থেকে এ সড়কে পরিবহন চলবে।