স্পোর্টস ডেস্ক :
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারালো সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। ফলে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হলো। ঢাকায় সিরিজের প্রথম টেস্ট ২০ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় দ্বিপক্ষীয় সিরিজটি ড্র’তেই শেষ হলো। প্রথম দু’টি সিরিজ জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া।
৯ উইকেটে ৩৭৭ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। লিড ছিলো ৭২ রানের। চতুর্থ দিন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ও লিড আর বাড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। দিনের ১১তম ডেলিভারিতে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান নাথান লিঁওকে তুলে নেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। শূন্য রানে শুরু করে সেখানেই থেমে যান তিনি। অন্যপ্রান্তে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন স্টিভ ও’কেফি। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর ৪টি, মিরাজ ৩টি, সাকিব-তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ৭২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে অসহায়ত্ব দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ২৯তম ডেলিভারিতেই প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আবারো নিজের ব্যর্থতা তুলে ধরেন ওপেনার সৌম্য সরকার। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান করা সৌম্য এবার করেন ৯ রান। পুরো সিরিজে তার রান ৬৫।
সৌম্য ফিরে যাবার পর দলের হাল শক্ত হাতেই ধরার চেষ্টায় ছিলেন তামিম ও তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েস। বন্ধন গভীর হতে দেননি তামিম নিজেই। অস্ট্রেলিয়ার সফল স্পিনার নাথান লিঁও’র ডেলিভারি অহেতুক উইকেট ছেড়ে ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং-এর ফাঁদে পড়েন ১২ রান করা তামিম।
দলীয় ৩২ রানে তামিম ফিরে যাবার পর ৪৩ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে দ্রুত যাওয়ার প্রতিযোগিতা করেন ইমরুল, সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেন। লিঁও’র বলে আলসামি শটে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন ১৫ রানে থাকা ইমরুল। তাই ধারাভাষ্যকাররা বলতে বাধ্য হনÑ নো ফিট, নো ইনন্ট্যান, নো পাওয়ার। ইমরুলের মত সাকিবেরও শিকারী ছিলেন লিঁও। স্লিপে ক্যাচ দেয়ার আগে মাত্র ২ রান করতে পারেন ঢাকা টেস্টের হিরো সাকিব। তবে নাসিরকে শিকার করতে পারেননি লিঁও। অস্ট্রেলিয়ার আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার স্টিভ ও’কেফির ডেলিভারি ফ্রন্টফ্রুটে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন নাসির। স্লিপে দাঁড়িয়ে কিছুটা হলেও কঠিন ক্যাচ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। নাসিরের সংগ্রহ ছিলো ৫ রান।
৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান। তাই ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে উইকেট আঁকড়ে ধরেন তারা। এতে কিছুটা লেন্থহীন হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইন। এই সুযোগে দলকে শতরানের কাছাকাছি নিয়ে যান মুশফিক ও সাব্বির। এমন সময় আবারো বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন লিঁও। প্রথম ইনিংসের মত এবারও সাব্বিরকে স্টাম্পিং-এ বিদায় দেন লিঁও। ২৪ রান করে সাব্বির আউট হলে মুশির সাথে ৫৪ রানের জুটি ভেঙ্গে যায় ।
এরপর দলের শেষ ভরসা হিসেবে ছিলেন মুশফিক ও মোমিনুল হক। প্রথম ইনিংসে চার নম্বরে ব্যাট করার মোমিনুল এবার নামেন আট নম্বরে। আর চার নম্বরে প্রমোশন পেয়ে ব্যর্থই হয়েছেন নাসির। তারপরও নিজেকে প্রমাণে যুদ্ধ শুরু করেছেন মোমিনুল।
কিন্তু মোমিনুলকে যুদ্ধের ময়দানে বেশিক্ষণ সহায়তা করতে পারেননি মুশফিক। অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্সকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন মুশি। ১২৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ১০৩ বল মোকাবেলা করে ৩১ রান করেন টাইগার দলপতি।
এরপর মোমিনুলকে তুলে নিয়ে ইনিংসে দ্বিতীয়, সিরিজে তৃতীয় এবং ক্যারিয়ারে ১২তম বারের মত ৫ বা ততোধিক উইকেট নেন লিঁও। পাশাপাশি ম্যাচে ১০ বা ততোধিক উইকেটও পূর্ণ করেন তিনি। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার এমন কির্তি গড়লেন লিঁও।
অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে দলীয় ১৪৯ রানে আউট হন মোমিনুল। তখন তার নামের পাশে ২৯ রান। এরপর ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে ম্যাচ জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ৮৬ রানের টার্গেট দেয় টাইগাররা। শেষ দিকে তাইজুল ৪ ও মোস্তাফিজ শূন্য রানে আউট হলেও, মেহেদি হাসান মিরাজ ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিঁও ৬টি, প্যাট কামিন্স ও স্টিভ ও’কেফি ২টি করে উইকেট নেন।
৯৩ বল মোকাবেলা করেই জয়ের জন্য ৮৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। এজন্য ৩টি উইকেটও খরচ করতে হয় তাদের। ডেভিড ওয়ার্নারকে ব্যক্তিগত ৮ রানে মুস্তাফিজুর, স্মিথকে ব্যক্তিগত ১৬ রানে তাইজুল ও রেনশকে ব্যক্তিগত ২২ রানে আউট করেন সাকিব। ৪৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পরও, জয় পেতে মোটেও সমস্যা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। কারণ পরবর্তীতে হাসিখুশী মুখে অসিদের জয় নিশ্চিত করেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
২টি করে চার ও ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। আর ২টি বাউন্ডারিতে ১৪ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন হ্যান্ডসকম্ব। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর-তাইজুল ও সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন- অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিঁও। আর যুগ্মভাবে সিরিজ সেরা হন অস্ট্রেলিয়ার লিঁও ও ওয়ার্নার।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩০৫, ১১৩.২ ওভার (মুশফিকুর ৬৮, সাব্বির ৬৬, লিঁও ৭/৯৪)।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৭৭/৯, ১১৮ ওভার) :
ম্যাট রেনশ ক মুশফিকুর ব মুস্তাফিজুর ৪
ডেভিড ওয়ার্নার ক ইমরুল ব মুস্তাফিজুর ১২৩
স্টিভেন স্মিথ বোল্ড ব তাইজুল ৫৮
পিটার হ্যান্ডসকম্ব রান আউট (সাকিব) ৮২
গ্লেন ম্যাকওয়েল ক মুশফিকুর ব মিরাজ ৩৮
হিল্টন কার্টরাইট ক সৌম্য ব মিরাজ ১৮
ম্যাথু ওয়েড এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ৮
অ্যাস্টন আগার বোল্ড ব সাকিব ২২
প্যাট কামিন্স এলবিডব্লু ব মিরাজ ৪
স্টিভ ও’কেফি অপরাজিত ৮
নাথান লিঁও ক ইমরুল ব মুস্তাফিজুর ০
অতিরিক্ত (বা-৮, লে বা-৩, ও-১) ১২
মোট (অলআউট, ১১৯.৫ ওভার) ৩৭৭
উইকেট পতন : ১/৫ (রেনশ), ২/৯৮ (স্মিথ), ৩/২৫০ (হ্যান্ডসকম্ব), ৪/২৯৮ (ওয়ার্নার), ৫/৩২১ (কার্টরাইট), ৬/৩৪২ (ওয়েড), ৭/৩৪৬ (ম্যাক্সওয়েল), ৮/৩৬৪ (কামিন্স), ৯/৩৭৬ (আগার), ১০/৩৭৭ (লিঁও)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মিরাজ : ৩৮-৬-৯২-৩,
মুস্তাফিজুর : ২০.৫-২-৮৪-৪ (ও-১),
সাকিব : ৩১-৩-৮২-১,
তাইজুল : ২১-১-৭৮-১,
নাসির : ৬-২-১৪-০,
মোমিনুল : ২-০-৬-০,
সাব্বির : ১-০-৯-০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল স্টাম্পিং ওয়েড ব লিঁও ১২
সৌম্য সরকার ক রেনশ ব কামিন্স ৯
ইমরুল কায়েস ক ম্যাক্সওয়েল ব লিঁও ১৫
নাসির হোসেন ক স্মিথ ব ও’কেফি ৫
সাকিব আল হাসান ক ওয়ার্নার ব লিঁও ২
মুশফিকুর রহিম ক ওয়েড ব কামিন্স ৩১
সাব্বির রহমান স্টাম্পিং ওয়েড ব লিঁও ২৪
মোমিনুল হক ক কামিন্স ব লিঁও ২৯
মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ১৪
তাইজুল ইসলাম বোল্ড ব লিঁও ৪
মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড ব ও’কেফি ০
অতিরিক্ত (বা-১২) ১২
মোট (অলআউট, ৭১.২ ওভার) ১৫৭
উইকেট পতন : ১/১১ (সৌম্য), ২/৩২ (তামিম), ৩/৩৭ (ইমরুল), ৪/৩৯ (সাকিব), ৫/৪৩ (নাসির), ৬/৯৭ (সাব্বির), ৭/১২৯ (মুশফিকুর), ৮/১৪৯ (মোমিনুল), ৯/১৫৬ (তাইজুল), ১০/১৫৭ (মুস্তাফিজুর)।
অস্ট্রেলিয়া বোলিং :
প্যাট কামিন্স : ১১-৩-২৭-২,
নাথান লিঁও : ৩৩-১১-৬০-৬,
স্টিভ ও’কেফি : ২২.২-৬-৪৯-২,
অ্যাস্টন আগার : ৫-১-৯-০,
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস :
ম্যাট রেনশ ক মুশফিকুর ব সাকিব ২২
ডেভিড ওয়ার্নার ক সৌম্য ব মুস্তাফিজুর ৮
স্টিভেন স্মিথ ক মুশফিকুর ব তাইজুল ১৬
পিটার হ্যান্ডসকম্ব অপরাজিত ১৬
গ্লেন ম্যাকওয়েল অপরাজিত ২৫
অতিরিক্ত ০
মোট (৩ উইকেট, ১৫.৩ ওভার) ৮৭
উইকেট পতন : ১/১৩ (ওয়ার্নার), ২/৪৪ (স্মিথ), ৩/৪৮ (রেনশ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর : ৫-১-১৬-১,
সাকিব : ৬-১-৩৫-১,
তাইজুল : ৪-০-২৬-১,
নাসির : ০.৩-০-১০-০।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ।
ম্যাচ সেরা : নাথান লিঁও (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ সেরা : ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)।