বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ সংযোগ ফেরী সার্ভিস দীর্ঘ দিন থেকে বন্ধ, সরকারী সম্পদ বিনষ্ট ও জনদুর্ভোগ বাড়ছে

42

মাহবুব আহমদ খান, বিয়ানীবাজার থেকে :
বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ সংযোগ ফেরী কুশিয়ারা নদীর বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরী সার্ভিস দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকায় পানি ও পলি মাটির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে প্লন্টুনসহ নানা মুল্যবান যন্ত্রাংশ। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। ইজারা সংক্রান্ত জটিলতার দোহাই দিয়ে ফেরী সার্ভিস বন্ধ করায় মূল্যবান প্লন্টুনসহ যন্ত্রাংশ তলিয়ে যাচ্ছে পলি মাটির গহ্বরে, জং ধরেছে ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে। পূর্ব সিলেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনচলাচলের এ পথটি বন্ধ থাকায় জনসাধারণ প্রতিদিনই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে। ফেরী সার্ভিস চালু করার দাবিতে দু’পারের বাসিন্দাসহ ভোক্তভুগিরা ইতিমধ্যে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজারসহ পূর্ব সিলেটে যাতায়াতের অন্যতম সহজ সংযোগ রাস্তা হচ্ছে গোলাপগঞ্জ, আমুড়া ভায়া বিয়ানীবাজার সড়ক। এখানে কুশিয়ারা নদীর উপর বিগত ১ যুগ পূর্বে বহরগ্রাম-শিকপুর খেয়াঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা তীরবর্তী অঞ্চলের জনসাধারণ সহজেই বিভিন্ন ধরনের যান-বাহন নিয়ে যাতায়াত করতেন। দীর্ঘ এক যুগে বার বার যান্ত্রিক কারণে ফেরী সার্ভিস বন্ধ হলে দু‘একদিনের মধ্যে আবার চালু হত। বিগত দেড় বছর ধরে ইজারা সংক্রান্ত জটিলতার কথা উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ ফেরী সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কুশিয়ারা তীরবর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে পূর্ব সিলেটের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। একটানা ১২ বছর ফেরি চলাচলের পর হঠাৎ করে বন্ধ হওয়ায় ৩টি উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার অনেকেই বার বার জেলা পরিষদে ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। ঐ ফেরী সার্ভিস থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভাটিতে চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু নামে একটি সেতু বিগত আড়াই বছর আগে চালু হলে অনেকেই ঐ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। এতে বহরগ্রাম শিকপুর ফেরী সার্ভিসের গুরুত্ব অনেকটা কমে যায়। যাত্রী ও যান-বাহন কমলেও সওজ কর্তৃপক্ষ ফেরী সার্ভিসের ইজারা মূল্য না কমানোর কারনে ইজারা নিতে অনেকেই আগ্রহ হারান। এতে সড়ক ও জনপথের নিজস্ব লোকজন দ্বারা কিছু দিন ফেরী সার্ভিস চালু রাখা হয়। ফেরী সার্ভিস চালু হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে এমন অজুহাত তুলে এক পর্যায়ে তা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকে ফেরী ও যন্ত্রাংশ, দু’তীরে পলি মাটিতে তলিয়ে যেতে থাকে প্লন্টুন। এমনকি ফেরী সার্ভিসের রাস্তা মেরামত ও পন্টুন উঠা নামানোর কাজে ব্যবহৃত ক্র্যানটিও জং ধরে পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারী সম্পদ নষ্ট হলেও কর্তৃপক্ষের কোন গরজ নেই। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে গোলাপগঞ্জের অনেকেই যোগাযোগ করেও কোন সুফল পাননি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় নাগরিকদের বক্তব্য হচ্ছে গত দেড় বছর আগে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে যায় উভয় তীরের পন্টুন, বন্ধ হয় পারাপার। ফেরিতে নিয়োজিত কর্মচারীরা আজ,কাল করে প্রায় মাস খানেক বন্ধ রাখার পর সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ হয়। তারা ফেরি বন্ধের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মচারী জানান, জেলা পরিষদ ভর্তুকি দিয়ে ফেরি চালাতে নারাজ।
এ ব্যাপারে বুধবারীবাজার ইউপি’র চেয়ারম্যান মস্তাব উদ্দিন কামাল ও আমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহেল আহমদ যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ফেরিটি পুনরায় চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ফেরি বন্ধের কারণে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার মালামাল শেওলা ব্রিজ ও চন্দরপুর-সুনামপুর ব্রীজ দিয়ে আনতে পরিবহন খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। এ খরচ যোগান দিতে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাধ্য হয়ে বাড়ানো হয়, ফলে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর জোরালো দাবি ফেরী সার্ভিসটি দ্রুত চালু করে যেন জন-চলাচলের পথটি সুগম করা হয়।
এ ব্যাপারে সওজের এসডিই যুথিষ বসু গোস্বামী’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফেরির এ্যাপ্রোচ রোডের বেহালদশা এবং পুরনো যন্ত্রাংশ থাকায় ফেরি চালাতে অনেক কষ্ট হয়, এরপর উপযুক্ত ইজারাদার না পাওয়ায় জেলা পরিষদ ভর্তুকি দিয়ে ফেরি চালাতে অনেকটা নারাজ।
তিনি আরোও জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক হলে তারা জানিয়েছেন উপযুক্ত ইজারাদার না পেলে ভর্তুকি দিয়ে ফেরি চালানো সম্ভব নয়।